সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
বৃষ্টির ছোঁয়া বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের গায়ে কতটা লেগেছে, কে জানে। তবে স্বস্তির পরশটা ঠিকই ছুঁয়ে যাওয়ার কথা ড্রেসিং রুমে। বড় লিড হজম করার পর প্রায় পুরো একটি সেশন খেলা না হওয়া তো আশীর্বাদ স্বরূপ!
বৃষ্টির ফোঁটায় স্বস্তির পরশ : চা বিরতির আগেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। চা-বিরতি দেওয়া হয় একটু আগেই। ২৫ মিনিট পর খেলা শুরু হতে দুই বলেই নেই বাংলাদেশের শেষ উইকেট। শ্রীলঙ্কা পেল ১৮২ রানের লিড। কিন্তু সেই লিড আর বাড়ানো হলো না তৃতীয় দিনে।
বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়েই নামতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। বিকেল সোয়া চারটার দিকে দিনের খেলা সমাপ্তির ঘোষণা আসে। চতুর্থ দিনে খেলা শুরু হবে ১৫ মিনিট আগে।
বিরতির পরই শেষ বাংলাদেশ : চা-বিরতি ও আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে ২৫ মিনিটের বিরতি। এরপর খেলা শুরু হতে না হতেই শেষ ইনিংস। বাংলদেশে শেষ উইকেটটি নিতে শ্রীলঙ্কার লাগল দুই বল। শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান আউট হলেন অদ্ভুতুড়ে ভাবে। লেগ স্টাম্পে পিচ করা বল ফ্লিক করেছিলেন মুস্তাফিজ। শর্ট লেগে ফিল্ডার নিজেকে বাঁচাতে সরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বল আটকে যায় তার কোলে! প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৪৯৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৩১২ রানে। স্বাগতিকদের লিড ১৮২ রানের।
শেষ উইকেটসহ হেরাথের উইকেট তিনটি। তিনটি নিয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরাও। দ্বিতীয় দিনে প্রথম ৪০ ওভারে তাকে বোলিংয়েই আনেননি হেরাথ। কিন্তু তিনিই ভেঙেছেন মুশফিক ও মিরাজের শতরানের জুটি।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন সান্দকান। তবে এই চায়নাম্যান বোলার উইকেট নিয়েছেন একটি।
হলো না মুশফিকের সেঞ্চুরি : আরেক প্রান্তে উইকেট পড়ছিল, বাড়ছিল মুশফিকের ওপর চাপ। চাইছিলেন রান বাড়াতে। সেই চাওয়ারই বলি হতে হলো। আউট হলেন ৮৫ রানে। রঙ্গনা হেরাথকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন। আগেই খেয়াল করে হেরাথ বল করেছিলেন টেনে। মুশফিক পারেননি বলের পিচ পর্যন্ত যেতে, খেলতে গিয়ে মিস করলেন লাইন। বোল্ড! গলে শেষবার মুশফিক করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। এবার থামলেন সেঞ্চুরির আগে। ৮ চার ও ১ ছক্কায় ১৬১ বলে ৮৫। বাংলাদেশ শেষের খুব কাছে। ৯ উইকেটে রান ৩১১।
শতরানের জুটির পর জোড়া ধাক্কা : একই বোলার, একইরকম ভুল। মুমিনুলের মতোই দিলরুয়ান পেরেরার সামনে খেলার বল পেছনে খেললেন মিরাজ। ফলও একই, এলবিডব্লিউ! আউট হওয়ার আগে অবশ্য দারুণ খেলেছেন মিরাজ। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তার শতরানের জুটিতেই ফলো অনের শঙ্কা দূর করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে মিরাজের উইকেট বয়ে এনেছে আরও একটি উইকেট। পরের বলেই এলবিডব্লিউ তাসকিন আহমেদ। আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। আগেই টেস্টই অর্ধশতক করা মিরাজ এদিনও খেলেছেন দারুণ কিছু ড্রাইভ। রেখেছেন লড়াইয়ের ছাপ। শেষ পর্যন্ত ফিরলেন ৪১ রানে। সপ্তম উইকেটে দুজনের জুটি রান ১০৬। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশর রেকর্ড জুটি মুশফিক ও সাকিবের ১১১, মিরপুরে। বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ২৯৮। ৭৫ রানে খেলছেন মুশফিক।
লাঞ্চের পর অন্য মুশফিক : লাঞ্চের সময় দলের আলোচনা কি ছিল কে জানে। লাঞ্চের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে অন্য মুশফিককে! বিরতি পর প্রথম ওভারেই বেরিয়ে এসে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারলেন হেরাথকে। ৮৮ বল খেলার পর মুশফিকের প্রথম বাউন্ডারি! পরের চার ওভারে এল আরও চারটি চার। ৮৪ বলে ২২ রান নিয়ে লঞ্চে গিয়েছিলেন মুশফিক। পরের ২৩ বলে ২৮ রান করে স্পর্শ করলেন অর্ধশতক। কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম ইনিংসেই সাফল্য। এবার এটি আরও বড় করার পালা। আরেক পাশে মিরাজ সঙ্গ দিচ্ছেন ভালোই। সপ্তম উইকেট জুটির রানও পঞ্চাশ ছাঁড়িয়েছে।
দুঃস্বপ্নের প্রথম সেশন : অনেক সম্ভাবনা নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। লাঞ্চের সময় সব সম্ভাবনার অপমৃত্যু হয়ে গেছে, ঘিরে ধরেছে শঙ্কা। সারাদিন ব্যাট করার আশা তখন দূরাশা, লড়াই ফলো অন বাঁচানো নিয়েই! সকালের সেশনেই বাংলাদেশ হারিয়েছে ৪ উইকেট। একটি উইকেটও সেভাবে বোলারের কৃতিত্ব নয়। সবই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপহার। দিনের তৃতীয় ওভারেই বাজে শটে সৌম্য সরকারের বিদায়ে শুরু। এরপর সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, লিটন, সবাই ফিরেছেন উইকেট বিলিয়ে। ব্যাটিংয়ে ছিল না দায়িত্বের ছাপ। এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাটই এখন ভরসা, যদি অপর প্রান্তে সঙ্গ দিতে পারেন বাকি সঙ্গীরা। সকালটি ভয়ানক হতে পারত আরও, যদিও না লাঞ্চে ঠিক আগে ক্যাচ ছাড়তেন গুনারতেœ। সান্দাকানের বলে স্লিপে মিরাজের ক্যাচ ছেড়েছেন গুনারতেœ। এই সান্দাকানই সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছেন বাংলাদেশকে। ৮৪ বলে ২২ রান নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছেন মুশফিক, মিরাজ অপরাজিত ১১। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২১৩। ফলো এন এড়াতে প্রয়োজন আরও ৮২ রান। ফিরলেন লিটন, ডাকছে ফলো অন! সময় যত গড়াচ্ছে, তৃতীয় দিনের সকাল বাংলাদেশে জন্য হয়ে উঠছে বিভীষিকা। মাহমুদউল্লাহর ধাক্কা সামাল না দিতেই আউট লিটন কুমার দাস। কুমারাকে দারুণ এক শটে চার মেরে শুরু করেছিলেন লিটন। কিন্তু ফিরলেন বাজে শটে। রঙ্গনা হেরাথের বলে জায়গা বানিয়ে ড্রাইভ করতে গেলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে, বলের লাইনে পা না নিয়েই। বল গেল স্লিপে। দলে ফেরার ইনিংসে লিটন ফিরলেন ৫ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য শুরু করেছেন জোড়া চার মেরে। তবে বাংলাদেশ এখন ভালোমতোই আছে ফলো অনের শঙ্কায়। ২০০ রান ছুঁতেই নেই ৬ উইকেট!
উড়ল মাহমুদউল্লাহর বেলস : কয়েকটি শর্ট ও শর্ট অব লেংথ বলে একটু নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শর্ট বলের ভাবনাই হয়ত তা কাল হলো। লাহিরু কুমারার লেংথ বলটা খেলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে। পা যেন আটকে রইল পিচে, গেল না বলের লাইনে। বোল্ড হলেন লাইন মিস করে। তৃতীয় দিন সকালে বাংলাদেশ হারাল তৃতীয় উইকেট। টেস্ট দলে জায়গা নিয়ে লড়তে থাকা মাহমুদউল্লাহ বিদায় ৮ রানে। দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটির পর এখন বাংলাদেশের ফলো অন এড়ানো নিয়েই শঙ্কা! বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৮৫। ১৫ রান নিয়ে লড়াই করছেন মুশফিক।
বাজে বল, সাকিবের আরও বাজে শট : আগের দিন থেকেই শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার ছিলেন লাকশান সান্দাকান। ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যনদের যা একটু ভুগিয়েছেন তিনিই। পরাস্ত করেছেন কয়েকবার। অথচ উইকেট পেলেন সম্ভবত সবচেয়ে বাজে বলেই! লেগ স্টাম্পে পিচ করা বল বেরিয়ে যাচ্ছিল আরও অনেক বাইরে দিয়ে। নির্বিষ, নিরীহ বলটি খেলতে গিয়েই আউট সাকিব আল হাসান। ব্যাটে লাগলো আলতো ছোঁয়া। দ্রুত লেগ স্টাম্পে চলে আসা ডিকভেলা নিলেন দারুণ ক্যাচ। ক্যারিয়ারে আরও একবার উইকেট উপহার দিয়ে ফিরলেন সাকিব। করেছেন ১৯ বলে ২৩ রান। বাংলাদেশ তখন ৪ উইকেটে ১৭৪ রান। রান-বলের হিসাবই বলছে সাকিবের খেলার ধরণ। শুরু থেকেই খেলেছেন শট। বেঁচেও গেছেন। একটি মিসহিটে ছক্কা পেয়েছেন, যেটি অনায়াসেই যেতে পারত ফাইন লেগ ফিল্ডারের হাতে। আরেকবার অল্পের জন্য ফিরতি ক্যাচ হননি লাকমলের কাছে। শেষ পর্যন্ত পারলেন না টিকতে।
সৌম্যকে হারিয়ে বাংলাদেশের শুরু : পরিকল্পনা বদলে রাউন্ড দা উইকেটে গেলেন সুরাঙ্গা লাকমল। কাজ করল ম্যাজিকের মতো! লেগ স্টাম্পে পিচ করা শরীর তাক করা শর্ট বল। সৌম্য সরকার যেন হকচকিয়ে গেলেন। না খেলতে পারলেন ঠিক ভাবে পুল শট, না পারলেন এড়াতে। বল ফাইন লেগে লাহিরু কুমারার হাতে! আগের ওভারের শেষ বলে দারুণ এক চার মেরেছিলেন সৌম্য। এবার শেষ বলে আউট। দিনের তৃতীয় ওভারেই শ্রীলঙ্কার সাফল্য। ৭১ রানে সৌম্যর বিদায়। বাংলাদেশ তখন ৩ উইকেটে ১৪২।-বিডিনিউজ