রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা পেতে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষজন। দীর্ঘ সময় লাইন ধরে সিরিয়াল নিয়েও ভিসার কাগজপত্র জমা দিতে পারেন না লোকজন। কাগজপত্রে ভুল ধরে ফেরত দেয়া হয়। তখন বাধ্য দিয়ে দালালদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভিসা করে নিতে হয়। ইতিমধ্যে নগরীর বর্ণালী মোড়ে ভিসার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে গড়ে উঠেছে দালালশ্রেণি। যারা অর্থের বিনিময়ে কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিসা পেতে সহযোগিতা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকে ভারত গমনেচ্ছুকদের ভিসা দেয়া হয়। মেডিকেল ও ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া হয় এ সেন্টার থেকে। ট্যুরিস্ট ভিসা সহজে পাওয় গেলেও মেডিকেল ভিসা পেতে দুর্ভোগের সঙ্গে অর্থও খরচ করতে হয় সাধারণ জনগণদের। তিন চার দিন ধরে ঘুরেও ভিসার কাগজপত্র জমা দেয়ার সিরিয়াল পাওয়া যায় না। সিরিয়াল নিতে একদিন আগে থেকে ভিসা সেন্টারের উপস্থিত হয়ে সিরিয়াল দিতে হয়। বেশিরভাগ সময় সিরিয়াল পেয়েও কাগজপত্র জমা হয় না ভিসা অফিসে। ভুল ধরে ফেরত দেয়া হয়। এতে আবার দুর্ভোগে পড়ে ভিসা করতে আসা মানুষজন। তখন বাধ্য হয়ে দালালদের অর্থ দিয়ে ভিসা করে নিতে হয় লোকজনদের।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে ভিসা করতে এসেছেন শাহিনূল ইসলাম (ছদ্মনাম)। গতকাল রাত ১০টার সময় তার সঙ্গে কথা হয় ভারতীয় ভিসা সেন্টারের সামনে থেকে। তখন ভিসার সিরিয়াল পাওয়ার জন্য শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। শাহিনূল ইসলাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই, নাম প্রকাশ না করলে বললো, কারণ নাম প্রকাশ করলে হাই কমিশন অফিস থেকে ব্লক মেরে দেয়া হবে। তখন আর কখনো ভিসা পাব না। তিনি বলেন, মেয়ে ও স্ত্রীর জন্য মেডিকেল ভিসা করতে এসেছি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ও রোববার ভিসার জন্য এসে ঘুরে গেছি। আজ (রোববার) বিকেল ৪টায় এসে সিরিয়াল পেয়েছে ৮৬ নম্বর। কাল (সোমবার) বেলা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তখন ভিসা অফিসে কাগজপত্র জমা দেয়ার সিরিয়াল পাওয়া যাবে।
কুষ্টিয়া থেকে ওয়াসিম আলমও এসেছেন তার অসুস্থ বাবার জন্য ভিসা করতে। ওয়াসিম জানান, তিন দিন ধরে ঘুরে ফিরে গেছেন, ভিসা পান নি। সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে অফিসে সিরিয়াল নেয়ার পর অফিস থেকে বলা হয় কাগজে ভুল আছে। কিন্তু কোথায় ভুল আছে, তা জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়া হয় না। বরং দারোয়ান দিয়ে বের করে দেয়া হয়।
কুষ্টিয়া থেকে ছোট্ট মেয়ের জন্য ভিসা করতে এসেছেন হাসান আলী ও ঊর্মি দম্পতি। তারাও সারারাত ওখানে দাঁড়িয়ে ভিসার সিরিয়াল নেবেন। তারা বলেন, কোনো উপায় তো নাই। সারারাত অপেক্ষা করি। মেয়েটার অসুখ। ভিসা পাওয়ার জন্য এ কষ্টটুক তো স্বীকার করতেই হবে। এত কষ্ট করেও যদি ভিসা পাওয়া যায় তবু ভালো।
গতকাল রাত ১০ দশটায় পুরুষদের সিরিয়াল পড়েছে ১৮৫ পর্যন্ত। পরে এই প্রতিবেদক সিরিয়াল দেয় ১৮৬ নম্বর। নারীরা ৫০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একদিনে ৬০ জনের বেশি মেডিকেল ভিসার কাগজপত্র জমা নেয়া হয় না। ফলে সব মানুষজন সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য ফোন দেয়া হলে রাজশাহীতে কর্মরত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।