ভারতের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্যও সতর্কমূলক

আপডেট: জুন ৫, ২০২৩, ১:০৯ পূর্বাহ্ণ

ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরের দুর্ঘটনার নেপথ্যে রেলের গাফিলতি এবং উদাসীনতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের খবওের উল্লেখ করা হয়েছে- দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন রুটে যে সঠিকভাবে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হচ্ছে না, সেটা ২০১৯ সালেই জানিয়েছিল রেল সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি। ৩ বছর আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, দক্ষিণপূর্ব রেলে বিপুল শূন্যপদের জন্য দুর্ঘটনার আশংকা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৯ সালে রেল সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি এই রিপোর্ট দিলেও কেন্দ্র সেটাকে পাত্তা দেয়নি। দক্ষিণ পূর্ব রেলে নতুন করে কর্মী নিয়োগ হয়নি। উলটে শূন্যপদ আরও বেড়ে গিয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মীর পদ এখনও শূন্য।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বহংগা বাজার স্টেশনে দুটি যাত্রীবাহী ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার গতিতে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল চেন্নাইমুখি করমন্ডল এক্সপ্রেস। হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লেনে স্থির থাকা একটি মালবাহী ট্রেনের ওপর উঠে যায় যাত্রীবাহী ট্রেনটির ইঞ্জিন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় করমন্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টির মতো বগি। এ ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও প্রচুর। ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে অনেকেরই পরিচয় এখনও জানা যায়নি। খোঁজ মেলেনি পরিবারের কারও। এখনও পর্যন্ত ১৬০টি মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়নি।
দেশটির রেলমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত লাইন সংস্কার করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনার শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ভারতের এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক। বিশ্বের মানুষকেও বেদনাহত করেছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তবে এই দুর্ঘটনা যে কারণেই হোক না কেন- দায়িত্বশীলদেও গাফলতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। দেশটির রেল সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি এখন সামনে এসেছে। এই সুপারিশ সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা হয়ত ঘটতো না। এতো বিপুল পরিমাণ লোকবল ঘাটিতি সুচারুরূপে ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দিবে সেটাই স্বাভাবিক।
তবে ভারতে রেলের এই দুর্ঘঘটনা ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়ার সুযোগ করে দিলো। বাংলাদেশের রেলওয়ের জন্যও এ সতর্কতা সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনার জন্য গাফলতি, কারণসমূহ এবং করণীয় বিষয়গুলো তদন্ত প্রতিবেদনে নিশ্চয় উঠে আসবে। সেটা বাংলাদেশের জন্য নিজেদের ভুল-ত্রটিগুলো শুধরে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিবে।
ভারতের রেল দুর্ঘনায় আমরাও শোকাহত। শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা রইল।