ভারত-পাকিস্তানের প্রতি শেখ হাসিনা ।। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটি শিগগিরই বন্ধ হোক

আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০১৬, ১১:১৬ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত আচরণ করার আহবান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। কাশ্মিরে সেনা ঘাঁটিতে হামলা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের ভেতর উত্তেজনার মধ্যে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই আহবান সময়োপযোগী। প্রধানমন্ত্রী এর আগেও ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধ বাধলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী উভয় ক্ষেত্রেই যথার্থ মন্তব্য করেছেন। কেননা যুদ্ধ বাধলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবচেয়ে বড় ক্ষতির আশংকা হবে- যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার অবাধ সুযোগ পাবেÑ যা এসব দেশগুলো সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে, রাষ্ট্রনামক যন্ত্রটি অকার্যকর হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারেÑআর্থ-সামাজিক ক্ষতিতো আছেই। এমন ঝুঁকি কোনো সুস্থ নেতৃত্বের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ কোনোভাবেই যুদ্ধকে মেনে নিতে চায় না। কিন্তু যুদ্ধটা বারবার মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
ভারত শাসিত কাশ্মিরের উরি সেনা ঘাঁটিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হামলায় ১৯ সেনা নিহতের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এরইমধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর দাবি করে। তবে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রমের দাবি নাকচ করে দুই পক্ষে গোলাগুলি হয়েছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়।
এরপর থেকে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যদের মধ্যে কয়েক দফায় গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে নভেম্বরে সার্ক সম্মেলনে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পরে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানও সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ এ সম্মেলন বাতিল হয়।
ভারত- পাকিস্তান পরিস্থিতিকে পুঁজি করে উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। ভারত ইতোমধ্যেই বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সাড়ে পাঁচ দশক আগে স্বাক্ষরিত এই আন্তর্জাতিক সিন্ধু জল চুক্তি একতরফাভাবে ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। সে দেশে পাকিস্তানের শিল্পী- কুশলী যারা ছিলেন ইতোমধ্যেই তাদের পাকিস্তানে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। উভয় দেশে যার যার সমর্থনে তাদের সামরিক শক্তির তথ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রতিযোগিতা করছে। এটি অনেকটাই রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা। আবার যে সব দেশ অস্ত্র সম্ভার রফতানি করে তারাও যুদ্ধের পরিস্থিতিকে উস্কে দিতে পারে। কিন্তু একটি যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখিন হবে যুদ্ধরত দেশের জনগণ- তারপরেই প্রতিবেশি দেশগুলো। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ এর যুদ্ধ এবং কারগিলের সংঘর্ষও ভারত-পাকিস্তান লিপ্ত হয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথেও সংশ্লিষ্ট।
পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধের বিষয়টি কোনো ইতিবাচক ধারণার মধ্যে যায় না। তারা অনেক সময় যুদ্ধ বাধানোর নানা অজুহাতও সৃষ্টি করে থাকে। কেননা সে দেশের নাগরিকরা খুন-খারাবি আর বন্দুকের গুলি বিনিময়ের মধ্যেই বড় হয়ে থাকে। ধর্মীয় উন্মাদনা সর্বস্ব একটি দেশের পক্ষে সেটিই স্বাভাবিক। এ কথার সাক্ষ্য দেয়, দেশটি ক্রমেই অকার্যকর রাষ্ট্রের পরিণতি পাচ্ছে। তবুও পাকিস্তানে শুভবোধসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয় এবং তারাও কোনো পরিস্থিতিতে একটা যুদ্ধকে প্রত্যাশা করে না। তাই উভয় দেশের উচিত হবে যথাশিগগিরই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটি বন্ধ করা। সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোসহ বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশসমূহের উচিৎ হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে উভয় দেশকে আহবান করা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ