ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন, স্টেট ডিপার্টমেন্টকে দুষছে বিজেপি

আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা (ডিপ স্টেট) ভারতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। এমন অভিযোগের পর ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও খারাপ হতে চলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

গত মাসে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, গৌতম আদানি যুক্তরাষ্ট্রে ২৬৫ বিলিয়নের ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হওয়ার পর এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিজেপি দাবি করেছে এই ষড়যন্ত্রে তদন্তকারী সাংবাদিক ও বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও জড়িত রয়েছে।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের মার্কিন অ্যাটর্নি অফিস গত ২০ নভেম্বর জানায়, ৬২ বছর বয়সী আদানি এবং তার কোম্পানির অন্য দুই নির্বাহী; সাগর আদানি ও ভিনীত জৈন, সম্ভাব্য ২ বিলিয়নের ডলারের মুনাফার আশায় একটি সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি পেতে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫০ মিলিয়নের ডলারের বেশি ঘুষ দিতে সন্মত হন।

এই মামলার অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, এখানে ২৫০ মিলিয়নের ডলারের বেশি ঘুষ দেওয়া, বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকগুলোকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিলিয়ন ডলার তোলা এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে।

মার্কিন আদালতের এই অভিযোগকে কেন্দ্রকরে ভারতে বিরোধী দলগুলো সংসদে সরকারের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় বিজেপি নেতারা আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং রাজিব গান্ধী ও সাংবাদিক জর্জ সোরোস রাজনৈতিক স্বার্থে মোদির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেন।

বিজেপির দাবি, এই মামলা ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং ভারতীয় নেতৃত্বকে অস্থিতিশীল করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণার অংশ।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিজেপি যখন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করার অভিযোগ করছে, তখন নয়াদিল্লি নিজেই সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের সম্পর্কে মিথ্যা এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে।

২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভিত্তিক সংস্থা ডিজইনফোল্যাব একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায় ভারতীয় কূটনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রচারের জন্য বিভিন্ন দেশে অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল।

ওই রিপোর্টে ৬৫টি দেশে ২৬৫টি ভুয়া মিডিয়া আউটলেটের সন্ধান পাওয়ার তথ্য দেয়া হয়। এগুলো বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চল দখলে ভারতীয় প্রচেষ্টার পক্ষে প্রচারণা চালানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো।

এই ওয়েবসাইটগুলোর অনেকগুলোই প্রায়শই ভুঁইফোড় মানবাধিকার সংগঠনের নামে চালানো হতো, এরা একে অপরের নিউজ শেয়ার করতো, নিউজগুলো এমনভাবে প্রচার করা হতো যার ফলে পাঠকদের তথ্যের উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যেতো।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এই ওয়েবসাইটগুলোর পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ, বিশেষ করে বিদ্রোহপ্রবণ বেলুচিস্তান প্রদেশের সমস্যাগুলো নিয়েও খবর ছাপতো।

ডিজইনফোল্যাবের তথ্যানুসারে এই ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে কিছু, যেমন দ্য আমেরিকান উইকলি, টাইমস অফ বুলগেরিয়া এবং টাইমস অফ সাইপ্রাস এই ধরনের নাম ব্যবহার করে তারা নিজেদের নির্ভরযোগ্য নিউজ আউটলেট হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করতো। এই আউটলেটগুলোর অনেকগুলোরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গ্লোবাল রিস্কস রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ভারত।
তথ্যসূত্র: টিআরটি, বাংলানিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ