মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কঠিন কথা খুব সহজেই বলে দিচ্ছেন। এতে আর যা-ই হোক চাটুকারেরা তার কাছ থেকে কোনো রকম প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেই মনে হয় না। স্বাভাবিকভাবে তিনি দলে এবং দলের বাইরের অনেককের বিরাগভাজন হবেন এটাই স্বাভাবিক।
তিনি যা বলছেন তা নতুন কিছু নয়। এসব কথা দেশের সাধারণ মানুষ হরহামেশাই বলে থাকেন। দেশের মানুষ এটা মানেন যে, তারা যেটা ভাবছেন সেটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি জনগণের কথার ধারধারবে কেন! রাজনীতিতে জায়গা করে নেয়া দুর্বৃত্তরা তো দেশ ও জনগণের রাজনীতি করে না রাজনীতি করে নিজেদের আখের গুছানোর জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুখে কিছুই আটকাচ্ছে না। সত্য কথাটি তা শুনতে যতই কঠিন হোক না কেন তিনি বলছেন। শুধু বলছেন না তার কাজের মধ্য দিয়েও পরিপালনের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন, দল, সরকার এবং দেশের জন্য।
রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে শ্রমিক লীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি ককতগুলি রুঢ় বাস্তবতা তুলে ধরেছে। যে বাস্তবতার মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে দুর্বৃত্তরা ঢুকে পড়ছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা অচেনা অজানা সংগঠনের সংবাদ না ছাপাতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছবি ছাপালে আর নিউজ দিলে এরা উৎসাহিত হয়। এর মাধ্যমে তারা চাঁদাবাজি করে। এদেরকে উৎসাহিত করবেন না। দাওয়াত দিলেই চলে যাবেন না।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন অভিজাত গুলসান ও ধানমন্ডি এলাকায় কৃষক লীগ শাখার দরকার কী? কারণ ওইসব এলাকায় ধান বা গম চাষ হয় না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে, যাদের সাথে মাটি ও ফসলের কোনই সম্পর্ক নেই তারা কীভাবে কৃষক লীগ করে? কৃষকের সংগঠনে শুধু কৃষক থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। ওবায়দুল কাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কি দরকার? শ্রমিক লীগের বিদেশে কি দরকার? তরুণ লীগ সম্পর্কেও তিনি বলেছেন,…এ লীগের হেডকোয়ার্টার কোথায়। ৫শ’ টাকা দিয়ে সিল একটা বানালেই তো হয়ে যায়।’
আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের বাইরে শ শ সংগঠন মাথা চাড়া দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে নানাসব বাহারি নামের ভুঁইফোড় সংগঠন তৈরি গড়ে উঠছে। এসব সংগঠনের পদ-পদবি ব্যবহার করে যতসব অপরাধকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। কেই দেখছে না বলেই তারা উৎসাহিত হচ্ছে।
তবে জনাব ওবায়দুল কাদের সংবাদ মাধ্যমের প্রতি যে পরামর্শ দিয়েছে, সেই পরামর্শটা সর্বাগ্রে মূল দলের নেতাকর্মীদের দিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হত। কেননা ওইসব ভুঁইফোড় সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কিংবা ছাত্রলীগের কোন কোনো নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকে। শুধু তাই নয়, এসব সংগঠনর আমন্ত্রণ রক্ষা করা হয় শীর্ষ নেতৃপর্যায় থেকে। উৎসাহ যোগানের ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কী হতে পারে?
ঘর গোছানোই বুদ্ধিমানের কাজ। ওইসব সংগঠনকে দলের কেউ প্রশ্রয় না দিলে ওইসব সংগঠন টিকতে পারবে না। এসব সংগঠন দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এগুলো সামাজিক অস্থিরতাও তৈরি করছে। এই মুহূর্তেই এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সত্যিকার অর্থেই যদি উপলব্ধি করেন যে, এসব সংগঠন দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে তা হলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।