সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
ভোলাহাট প্রতিনিধি :চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে কৃষিতে নতুনরুপে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ রঙিন ফুলকপির চাষাবাদ শুরু। আর লাভবান হচ্ছেন কৃষকরাও। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করে সফলতা পেয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ভালো ফলনের পাশাপাশি ফুলকপির ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। সাদা ফুলকপির চাইতে রঙিন ফুলকপি চাষাবাদে কম সময় লাগে বলে কৃষকরা এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছে।
রঙিন ফুলকপি আর সাদা ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য শুধু বীজেকৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশে রঙিন ফুলকপি চাষ শুরু হয়েছে। তবে ভোলাহাটে এবারই প্রথম চাষ হয়েছে রঙিন ফুলকপির চাষ। আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহযোগীতায় পরীক্ষামূলকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে দলদলী ইউনিয়নের খড়কপুর গ্রামে প্রথমবার এ রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে। চারা রোপণের পর থেকে প্রায় দুই মাসের (৫৫ দিনের) মধ্যে জমি থেকে ফসল তোলা যাচ্ছে। এই ফুলকপি চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক সাধারণ মানুষ। তাদের কেউ ফুলকপি কিনছেন, কেউ চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। এই রঙিন ফুলকপি চীন এবং ইউরোপে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দলদলী ইউনিয়নের খড়কপুর গ্রামের কৃষক মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম কৃষক এই উপজেলায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। শুরুর প্রথম দিকে আমি এ রঙিন ফুলকপি চাষ করে বেশ চিন্তার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু এর ফলন দেখে আমি খুব আশাবাদী যে, এ রঙিন ফুলকপি থেকে বেশ মুনাফা অর্জন করতে পারব। আগামীতে কৃষি অফিসের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এ রঙিন ফুলকপির চাষ আরো বেশি করে করব।
একই গ্রামের আরেক কৃষক মসিউর রহমান বলেন, এ রঙিন ফুলকপির চাষপদ্ধতি সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করে আমিও আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে আগামীতে আমিও এই রঙিন ফুলকপির চাষ বৃদ্ধি করব।
এছাড়া উপজেলার আরও দু’একটা প্লট সহ চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে মোট ৩ বিঘা জমিতে এ রঙিন ফুলকপির আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। এই রঙের সবজিতে অন্য রঙের সবজির তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন ‘এ’ উপাদান থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সুলতান আলী বলেন, যুগ যুগ ধরে বাজারে প্রচলিত সাদা ফুলকপির পাশাপাশি সারাদেশের ন্যায় ভোলাহাট উপজেলাতেও নতুনমাত্রা যোগ করেছে রঙিন ফুলকপি।সবজিটির নানা রঙের জাত; যার পুষ্টিগুণ ও স্বাদ তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া দাম ও লাভ ভালো হওয়ায় ‘ইউরোপে সালাদ’ হিসেবে ব্যবহৃত সবজিটি আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।
বাজারে নতুন আসা কমলা রংয়ের ফুলকপিতে রয়েছে বিটা কেরোটিন; যা শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়। আর রক্তবর্ণ ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্থোসাইয়ানিন; যা শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘সি’-এর প্রাচুর্যসহ সাধারণ ফুলকপির (সাদা ফুলকপি) সব পুষ্টিগুণ উপাদানই রয়েছে।
এবছর আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প ও কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ভোলাহাট উপজেলায় প্রথমবারের মত ৩ বিঘা জমিতে উচ্চমূল্যের ফসল রঙিন ফুলকপি, ব্রোকোলি ও রেড ক্যাবেজ চাষ হয়েছে। আমরা সফল হয়েছি। দাম ভাল থাকায় কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছি এবং সামনের বছর আরো বেশি পরিমানে আবাদ হবে।
কৃষিতে বৈচিত্র্য আসছে, কৃষক উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত ও প্রযুক্তি গ্রহন করছে। ফলে কৃষি একটি বাণিজ্যিক ও লাভজনক পেশায় পরিনত হচ্ছে।
এটি স্থানীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষে কতটা উপযোগী বা কেমন ফলন হয় আমরা দেখতে চেয়েছি। আমরা সফল হয়েছি বলে জানান। তিনি আরো জানান, অস্ট্রেলিয়া ও চীনসহ অন্যান্য দেশে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। তার মতে, সাধারণ ফুলকপি চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ হয়। খরচ ও পরিশ্রম একই। শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, প্রথমবার এ উপজেলায় রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ৩ বিঘা জমিতে এ রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ফসল। আশা করি আগামীতে এ রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষক লাভবান হবে এবং ভালো মুনাফা অর্জন করবে। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে আর এই সাফল্য নিসন্দেহে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভোলাহাটের। এই সাফল্যের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রসংশারও দাবিদার। তিনি পাশাপাশি ভোলাহাটে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলনেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।