রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
প্রাচীন কাল থেকে, মঙ্গল গ্রহের রহস্য নিয়ে মানুষের কৌতূহল ছিল সীমাহীন। পৃথিবী থেকে দূরের সেই লাল গ্রহটি যেন সবসময়ই বিজ্ঞানীদের কাছে একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন ছিল। বহু বছর ধরে মঙ্গল অভিযানের নানা রূপ দেখা গিয়েছে, কিন্তু ২০১২ সালে নাসা’র কিউরিওসিটি রোভারের মঙ্গল অভিযানে এক আশ্চর্য আবিষ্কার পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছিল।
অভিযানের এক নতুন মাইলফলকে, কিউরিওসিটি রোভার গ্রহটির গেদিজ ভ্যালিস চ্যানেলে একটি চমকপ্রদ প্রাকৃতিক উপাদান খুঁজে পায়- পিউর সালফার। পৃথিবী থেকে কোটি কোটি কিলোমিটার দূরে, সেই লাল গ্রহের পৃষ্ঠে যেটি আগে কখনও পাওয়া যায়নি, তা হলো একেবারে খাঁটি সালফার। একথা শোনার পর, বিজ্ঞানীদের চোখ বড় হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গল গ্রহে যে এতদিন শুধুমাত্র সালফেট খনিজ পাওয়া গেছে, তা তো জানাই ছিল, কিন্তু খাঁটি সালফার? সেটা যেন এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন।
মে মাসে, কিউরিওসিটি রোভার সেই পাথরের ওপর দিয়ে চলে যায় এবং পাথরটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই বেরিয়ে আসে উজ্জ্বল হলুদ রঙের সালফারের স্ফটিক। কিউরিওসিটি মিশনের প্রকল্প বিজ্ঞানী অশ্বিন ভাসবদা বলেছিলেন, “এটা যেন মরুভূমির মধ্যে একটি শীতল জলাধারের মতো কিছু।”
তবে, সবচেয়ে বড় চমক ছিল এই আবিষ্কারটি ছিল একেবারে খাঁটি সালফারের, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা জানতেন, মঙ্গলে সালফেট খনিজ পাওয়া যায়-এই খনিজগুলো সাধারণত সালফার এবং জলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। কিন্তু এই পিউর সালফার একেবারে ভিন্ন। এটি তৈরি হয়েছে এমন এক বিশেষ পরিস্থিতিতে, যা সাধারণত মঙ্গলের সেই অঞ্চলে দেখা যায় না।
এখন, পিউর সালফারের আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে আরও বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে – মঙ্গলের ভূতত্ত্বে আরও কত অজানা রহস্য রয়েছে? আশ্বিন ভাসবদা বলেছেন, “এটা এক ধরনের মরুভূমির মধ্যে অচেনা জলাধার খুঁজে পাওয়ার মতো ব্যাপার।”
এখন প্রশ্ন একটাই-মঙ্গলের ইতিহাসের সঙ্গে এই খাঁটি সালফারের সম্পর্ক কী? সাধারণত, সালফেট খনিজগুলো জল বাষ্পীভূত হওয়ার পর ফেলে যাওয়া অবশিষ্ট পণ্য হিসেবে থাকে। তবে পিউর সালফার কেন মঙ্গলের মাটিতে পাওয়া গেল, তা বিজ্ঞানীদের ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই আবিষ্কার মঙ্গলের জল নিয়ে ধারণাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, এর থেকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হয়তো মঙ্গলে অপেক্ষা করছে। নতুন নতুন সালফেট পাথর হয়তো ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে, যেগুলোর মাধ্যমে মঙ্গলের প্রাচীন ইতিহাসের আরও অনেক কিছু জানা যাবে।
তথ্যসূত্র: আজকাল অনলাইন