রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
ভারতের কোলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাতাণ্ডের ঘটনা বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ তোলপাড় করা ঘটনা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরপর অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেছে দেশে। এসব ঘটনা সারা দেশজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। আলোচনা-সমালোচনায় মুখর দেশ। সাবেক সেনা প্রধান আব্দুল আজিজ, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানের বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও এর উৎস নিয়ে দেশ তোলপাড় হচ্ছে। সবার মুখে মুখে একই আলোচনা- কীভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারে? তবে আলোচনার সর্বাগ্রে আছেন ছাগলকাণ্ডের হোতা মতিউর রহমান। তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোরবানির ইদের সময় ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে পঞ্চমবারের মতো অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বারবার কীভাবে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম থেকে তিনি নির্দোষ হিসেবে ছাড় পেলেন, কী কারণে চারবারেও তার দুর্নীতির উৎস খুঁজে পেলো না দুদক-এসব প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বলছে, মতিউর রহমান শুরু থেকেই ছিলেন ‘ধুরন্ধর’ প্রকৃতির। সবসময় ওপর মহলকে ম্যানেজ করে চলেছেন। মতিউরের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে হয়তো সক্ষমতার অভাব ছিল, আর না হয় ‘ম্যানেজ’ হয়েছিলেন তদন্তে জড়িতরা।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী সব সরকারের আমলেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে চিঠি পেয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালে প্রথম দুদক থেকে তিনি ‘ক্লিন’ হিসেবে চিঠি পেয়েছিলেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে একবার এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৩ সালে ও সর্বশেষ ২০২১ সালে দুদকের কাছে যাওয়া অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন তিনি।
মতিউরের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এসেছে- অথচ তার কিছুই হয় না। তিনি যদি এতোই স্বচ্ছ মানুষ হবে- তা হলো এতো অভিযোগ কেন তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ মিথ্যে হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়নি কেন? কোনোভাবে একটা ম্যানেজেবল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল; যার মধ্য দিয়ে মতিউর রহমান বারবার রেহায় পেয়ে গেছেন।
দুর্নীতি দমনের পরিস্থিতি এমন হলে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধ শুধু কথার কথা থেকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে দুর্নীতির সামাজিকিকরণ ঘটবে- দুর্নীতি সমাজে অপরাধ হিসেবে গন্য হবে না। তেমনই আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছারই প্রতিফলন। মতিউর চারবার কীভাবে ক্লিন সার্টিফিকেট পেলেন সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখার সময় হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে- দেশের মানুষ এমনই প্রত্যাশা করে।