মহান স্বাধীনতা দিবস আজ || মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইন চাই

আপডেট: মার্চ ২৬, ২০১৭, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

আজ  মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পূর্তি হল। বাঙালি জাতির দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম,আপসহীন আন্দোলন এবং একাত্তরের নয়মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা সংগ্রামে দীর্ঘ পথচলায় এবং জনযুদ্ধের প্রতিটি মুহুর্তে যাঁর নেতৃত্ব বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছে, শৌর্য-বীর্যে সাহসে স্পর্ধায় মরণোন্মুখ পথ মাড়িয়ে জীবনের জয়গান গাইতে শিখিয়েছেন- তিনিই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  বাঙালির এই গৌরবের দিনে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা ও সালাম। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মদান এবং চার লক্ষ নারী- যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের।
বাঙালি জাতি তাদের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্যেই উপলব্ধি করেছে একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণ-বঞ্চনাহীন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার। এই চেতনাই জাতিকে স্বাধিকার আন্দোলনের ধারা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। তিলে তিলে সংগঠিত করে জাতিকে চূড়ান্ত জনযুদ্ধে সম্পৃক্ত করেছিলেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  ১৯৭১ সালে ৭ মার্চে স্মরণকালের এক সেরা ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা ওয়্যারলেসযোগে বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে সক্ষম হন। এতে তিনি বলেন, “সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। .” তিনি সবাইকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানান। এটি ছিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
মহান স্বাধীনতার ৪৬ বছর পূর্তির দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। জাতি এমন একটি প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, যখন একাত্তরে পরাজিত শক্তি আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে নস্যাৎ করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অগ্রসর হচ্ছে -সেই সময় মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার, ইতিহাসকে বিকৃত করার, শহিদদের অবমাননা করার ধৃষ্ট-অপরাধ প্রদর্শিত হচ্ছে, শহিদ ও জাতির প্রতি অবমাননাকর কথা উচ্চারিত হচ্ছে। হিং¯্র শ্বাপদেরা বিবর থেকে বেরিয়ে এসে জাতিসত্ত্বাকে দংশন করতে উদ্যোত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এই পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায্যতা, মানবাধিকার, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই এর লক্ষ্য। দেশের জাতীয় রাজনীতিকে সেই পথ ধরেই হাঁটতে হবে। কেউ বা কোনো দল এর ব্যত্যয় ঘটালে তা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মানবিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হিসেবে গন্য করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনে ধরনের কটূক্তি, ইতিহাসের বিকৃতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। এ জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জাতি জানিয়ে আসছে। দাবি উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাতিল এবং তাদের পোষ্যদের নাগরিক অধিকার খর্ব করার দাবি, সেই সাথে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধসহ ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে একাট্টা জাতি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এসব দাবির বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। এর সাথে জাতির আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সাথে আইনের শাসন ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সম্পর্ক খুবই নিবিড়। জাতীয় রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ ধারা ক্রিয়াশীল থাকার অর্থ হচ্ছে দেশ-মাতৃকার প্রতি অবমাননা, শহিদদের প্রতি অবমাননা, গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য মর্যাদা ও গৌরবের অপমান। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা হতে পারে না। এ জন্য জাতিকে প্রস্তুত করা, উদ্বুদ্ধকরার ধারাবাহিক কর্মসূচির প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যারা ছিল আর যারা মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় গৌরবের অধ্যায়কে বিতর্কিত- বিকৃত করতে চায়Ñ তাদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ সহনশীল হতে পারে না। প্রতিরোধ-দমনই একমাত্র পথ। সেই শপথের মধ্যে বাংলাদেশ আছে, আগামীতেও থাকবে। তারুণ্যের এই অহঙ্কার, এই অঙ্গীকার, এই বন্ধন চির অটুট থাকবে ।
দৈনিক সোনার দেশের অগণতি পাঠক, শুভান্যুধায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের জানাই মহান স্বাধীনতা দিবসের  শুভেচ্ছা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ