মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী):
বাঘায় পদ্মা নদীর চরে গ্রীষ্ম মৌসুমে পণ্য পরিবহণের একমাত্র ভরসা মহিষের গাড়ি। সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে কালিদাসখালী চর থেকে মহিষের গাড়িতে ফসল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক গাড়োয়ান। তিনি চকরাজাপুর ইউনিযনের ১১টি চরে গ্রীষ্ম মৌসুমে মহিষের গাড়ি করে এবং বর্ষায় নৌকায় পণ্য-সামগ্রী পরিবহণ করেন। চরে রাস্তা না থাকায় এলোমেলো পথে পণ্য-সামগ্রী পরিবহণ করতে হয়। চরের অনেকেই মহিষের গাড়ির ওপর জীবিকা নির্বাহ করে।
এদিকে বাঘার পদ্মা নদী ক্যানেলের ওপর শিমুলতলাঘাট, চাঁদপুরঘাট, পালপাড়াঘাট, সরেরহাটঘাট, খায়েরহাট ক্লাবেরঘাট, খায়েরহাট হালিম মাস্টারেরসহ ৬টি ঘাট রয়েছে। এসব ঘাটের যেকোনো স্থানে একটি সেতু নির্মিত হলে চরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ সহজেই উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবেন।
চকরাজাপুর ইউনিয়নে চকরাজাপুরচর, কালীদাসখালী, লক্ষ্মীনগর, দাদপুর, উদপুর, পলাশী ফতেপুর, ফতেপুর পলাশী, নিচ পলাশী, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, দিয়াড়কাদিরপুরসহ ১১টি চর রয়েছে। এসব চরের মানুষ বর্ষায় নৌকা আর গ্রীষ্মে মহিষের গাড়ি বা বাঁশের সাঁকো আবার কখনো পায়ে হেঁটে পারাপার হন। বর্ষাতে নৌকায় পার হতে গিয়ে অনেকেই পদ্মায় নিখোঁজ হয়েছেন, আবার অনেকেই মারাও গেছেন।
পদ্মার মধ্যে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ নেই। এ কারণে সেখানকার শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পাশ করার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে লেখাপড়াই বন্ধ করে দেয়। যারা লেখাপড়া করেন, তাদের অনেক কষ্টে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।
চর এলাকায় চাষ হওয়া বিভিন্ন কৃষিপণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিক্রি হয়। যাতায়াত ব্যবস্থার অভাবে এসব উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব কম দামে সেখানেই ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হয় চাষিদের।
কালিদাসখালীর মহিষের গাড়ির মালিক আবদুল ওহাব শেখ বলেন, চরে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ হয়। বর্তমা সেখানে প্রচুর পরিমাণে আলুর চাষ হয়েছে। গ্রীষ্মে বস্তাপ্রতি ২০-৫০ টাকা দরে মাঠ থেকে বাড়ি পৌঁছে দিই। প্রতিদিন যা আয় হয় তাতে ৬ সদস্যের সংসার ভালভাবে চলে।
রোববার (১৬ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪ টায় পদ্মা নদীর ঘাটে কথা হয় চকরাজাপুর চরের মিজানুর রহমান মাস্টারের সাথে। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে মাঠ থেকে পণ্য-সামগ্রী তুলে মহিষের গাড়িতে করে আনা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
এছাড়া বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। বর্ষা ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমে মহিষের গাড়ি বা পায়ে হেঁটে ঘাটে আসতে হয়। এরপর পদ্মা পার হতে হয়। হালিম মাস্টারের ঘাট ও গোকুলপুর ঘাটে পদ্মা নদীর উপর ব্রিজ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অপরদিকে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চৌমাদিয়ায় ওয়ার্ড মেম্বর আবদুর রহমান দর্জি বলেন, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া ও দিয়াড়কাদিরপুর চর চকরাজাপুর মিলে ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড। এরমধ্যে ১ নম্বর আতারপাড়ায় ভোটার সংখ্যা ৩৭৩, ২ নম্বর ওয়ার্ড চৌমাদিয়ায় ভোটার ৫৫৬এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ারকাদিরপুর ভোটার সংখ্যা ৯৮৭ জন। এই তিন ওয়ার্ডে পরিবার রয়েছে প্রায় ৭৫০টি।
জনসংখ্যা রয়েছে ৩ হাজার ৫০ জন। এ তিন চরে মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নেই কোনো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যেই আবার অসময়ে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এই ভাঙনের কারণে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা প্রকৌশলী বেলাল হোসেন বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় খায়েরহাট হালিম মাস্টারের ঘাটে ৬০০ মিটার একটি সেতুর জন্য কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন হয়নি।