সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় ভান্ডারী রীতিতে নুরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারীকে দাফনে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে মাইজ ভান্ডারীর ভক্তদের সাথে সামাজিক লোকদের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বাড়ির মধ্যে রাখা কিছু চেয়ার ভাংচুর করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকাল ১১টায় উপজেলা মনিগ্রাম ইউনিয়নের মনিগ্রাম দক্ষিণপাড়া গ্রামে। পরে চেয়ারম্যান ও পুলিশের হস্তক্ষেপে শরিয়ত অনুযায়ী নুরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারীকে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলার মনিগ্রামের দক্ষিণ পাড়া গ্রামে পল্লিচিকিৎসক, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার এবং কন্ঠশিল্পী নূরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারী বুধবার (১০ জুলাই) রাত ২ টার দিকে নিজ বাসভবনে হঠাৎ হার্ডস্টোকে মারা যান। তার মারা যাওয়া খবর শুনে হাজারো ভক্ত সকাল থেকে বাড়িতে ভিড় করতে থাকে। মাইজ ভান্ডারীর রীতি অনুযায়ী বাড়ির পাশে কবর খোড়া শুরু করা হয়। কিন্তু সামাজিকভাবে ভান্ডারী রীতিতে দাফনে বাধা দেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয়ে উত্তেজিত হয়ে কিছু চেয়ার ভাংচুর করে। ঘটনাটি জানার পর বাঘা থানার পুলিশ ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এসে উভয়ের সাথে কথা বলে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তাকে দাফন করা হয়।
নুরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারী পেশায় একজন পল্লিচিকিৎসক। দীর্ঘ ৫০ বছর সুনামের সাথ এই পেশায় সেবাদান করে আসছিলেন তিনি। উপজেলার মনিগ্রাম বাজারস্থ ‘বাবা ভান্ডারী সেবা সদন’ নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে রয়েছে তাঁর। একজন গ্রাম ডাক্তার হিসাবে তাঁর ব্যাপক সুনাম রয়েছে নিজ এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে। পল্লীচিকিৎসক নূরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারী একজন সুপরিচিতি ব্যক্তি।
ভক্ত ও সামাজিক লোকরা উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর করা চেয়ার
তিনি চিকিৎসা ও সমাজসেবা মূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি গীতিকার এবং কন্ঠশিল্পী হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত একজন গীতিকার ও কন্ঠশিল্পী। তাঁর নিজস্ব একটি ‘সুর তরঙ্গ বিদ্যানিকেতন’ রয়েছে। এই সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবেও তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। তিনি পল্লি চিকিৎসক হিসেবে বিশেষ অবদান রাখায় ‘মহাত্মা গান্ধী স্বর্ণপদক-২০১৭’ অর্জন করেন। মাইজ ভান্ডারী হিসেবে তাঁর সারা দেশে হাজারো ভক্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে মনিগ্রামের দক্ষিণ পাড়া গ্রামে আবদুস সামাদ বলেন, নুরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারী একজন মুসলিম হয়েও ভান্ডারী রীতিতে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেটা মুসলিম শরিয়ত মোতাবেক হচ্ছে না মর্মে সমাজের লোকজন তাঁর দাফনে বাধা দেন। পরে চেয়ারম্যান ও পুলিশ এসে মুসলিম শরিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে মনিগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পর উভয়ে নিয়ে বসে শরিয়ত অনুযায়ী দাফনের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, নুরুজ্জামান মাইজ ভান্ডারীর দাফন নিয়ে ভক্ত ও সামাজিক লোকজনের মধ্যে দ্বিমত সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সেখানে গিয়ে উভয়কে নিয়ে বসে মুসলিম শরিয়ত অনুযায়ী দাফনের কথা বলা হয়েছে। তারা সেই মোবাবেক দাফন করেন।