মাঝারি তাপপ্রবাহ অস্থির জনজীবন গরমে সুস্থ থাকতে যা করতে হবে

আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪, ৮:০০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহীতে মৃদ্যু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগুন ঝলসানো রোদে তেতে উঠছে পথঘাট। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না মানুষ। তবে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। দাবদাহের কারণে মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবী ও রোজাদাররা তীব্র গরমে বেশ কষ্ট পাচ্ছেন। তাপমাত্রার পারদ সামনে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতর।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ব্যবধান কম হওয়ায় রাতেও অস্বস্তিকর গরম থাকছে। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস’র ভারপ্রাপ্ত-কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন এখন বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেয়। তবে তাপমাত্রা আরো বাড়বে।
উল্লেখ্য, সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ এর উপরে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গরমে অসুস্থতা হতে রক্ষা পেতে যা জানা জরুরি
১. সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা
বেলা ১২ টা হতে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা বেশি থাকে।
এ সময় জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে বের না হওয়াটাই ভালো।

২. ছাতা ব্যবহার
বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করা, যাতে সরাসরি রোদের মধ্যে থাকতে না হয়। এ সময় চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে।
মি. আহমেদ বলেন, যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করেন, তারা মাথায় ‘মাথাল’ জাতীয় টুপি ব্যবহার করতে পারবেন, যা তাদের রোদ হতে রক্ষা করবে।

৩. বেশি করে পানি পান করা
গরমে ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিষ্কার পানি বের হয়ে যায়, তখন ইলেট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হতে পারে। এ কারণে এই সময়টাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
লবণ মিশিয়ে পানি পান করতে পারলে আরো ভালো। ফলের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, তবে এ জাতীয় জুস খাওয়ার সময় দেখে নিতে হবে সেটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে তৈরি কিনা। খোলা, রাস্তার পাশের দুষিত পানি বা সরবত এড়িয়ে চলতে হবে।

৪. সূতির কাপড় পরতে হবে
গরমের এ সময়টাই জিন্স বা মোটা কাপড় না পরে সুতির নরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
এ ধরনের কাপড়ে অতিরিক্ত ঘাম হবে না এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করবে।
গরমের কালে কালো বা গাঢ় রঙ্গের কাপড় এগিয়ে সাদা বা হালকা রঙ্গের কাপড় পরিধান করা ভালো, কারণ হালকা কাপড় তাপ শোষণ করে কম।

৫. সঠিক জুতা নির্বাচন
গরমের সময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত, যাতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
কাপড় বা সিনথেটিকে বাদ দিয়ে চামড়ার জুতা হলে ভালো, কারণ এতে গরম কম লাগে। সম্ভব হলে মোজা এড়িয়ে চলা যেতে পারে।

৬. ভারী ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন
এ জাতীয় খাবার হজম করতে সময় বেশি লাগে। ফলে সেটি শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সেটি আরো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
খাবারের মেন্যু হতে গরম কালে মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড, তেলযুক্ত খাবার ইত্যাদি বাদ দেওয়া যেতে পারে। বরং শাকসবজি এবং ফলমূল বেশি করে খেতে পারে।

৭. পুরনো বা বাসী খাবার না খাওয়া
গরমে খাবার-দাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
ফলে বাসী-খাবার বা আগের দিন রান্না করা খাবার খায়ার আগে দেখে নিতে হবে যে, সেটি ভালো কিনা। এ জাতীয় খাবার খেলে পাতলা পায়খানা, ডায়রিয়াসহ পেটের অসুস্থ হতে পারে।

৮. ঘরে পানি ভর্তি বালতি রাখা
এসি না থাকলেও সমস্যা নেয়। ঘরের ভেতর ফ্যানের নীচে ১টি পানি ভর্তি বালতি রাখুন, যা ঘরকে খানিকটা ঠাণ্ডা করে তুলবে।

৯. প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করা
গরমের সময় প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে, যা শরীর ঠাণ্ডা রাখবে। দিনে একাধিকবার হাত, মুখ, পায়ে পানি দিয়ে ধুতে পারলে ভালো।
বাইরে বের হলে ১টি রুমাল ভিজিয়ে সাথে রাখতে হবে, যা দিয়ে কিছুক্ষণ পর-পর মুখ মুছে নেওয়া যাবে।

১০. হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা
প্রচণ্ড গরমে দেহের তাপ-নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট-স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।
ফলে মাংসপেশি ব্যথা, দুর্বল লাগা ও প্রচণ্ড পিপাসা হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে প্রেশার পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ