শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট:
ডাক্তারসহ জনবল সংকটে খুড়িয়ে চলছে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। প্রায় ৩ লক্ষ জনবসতির চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে অনুমোদিত চিকিৎক ২৭টি পদের ২৩টি পদই শুন্য। মাত্র ৪জন ডাক্তার দিয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। শুন্য রয়েছে কার্ডিওলোজি, অর্থপেডিক্স, সার্জারি, ইএনটি, অপথোমেলোজি ও সাজারি বিভাগে চিকিৎসক নেই। শিশু, এনেসথেশিয়া ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসক পদ। ফলে একরকম বন্ধ রয়েছে জরুরী প্রসূতিসেবাসহ সকল প্রকার চিকিৎসাসেবা। টেকনেশিয়ান ও অপারেটরের অভাবে পড়ে আছে এক্্ররে, ইসিজি ও সনোরোজিষ্ট মেশিন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৮ জনের জায়গায় রয়েছে মাত্র ১জন।
চিকিৎসাসেবায় জেলার একসময়ে প্রথম হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীদের বিস্তর অভিযোগ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী ৫ টাকা মূল্যের কুপন সংগ্রহ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও রোগীরা কাঙ্খিত চিকিৎসকদের সাক্ষাত পান না। জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত চিকিৎসক বসবে কিনা অথবা কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা মিলবে কিনা তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না।
জিজ্ঞাসা করলে বলে চিকিৎসক বাইরে কমিউনিটি সেন্টার পরিদর্শন করছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত চিকিৎসক না থাকলে তার চেম্বারের সামনে নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে অথবা টিকিট কাটার পূর্বে রোগের বিবরন অনুযায়ী চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে তা রোগীদের অবগত করার বিধান রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অধিকাংশ চিকিৎসক রাজশাহী থেকে যাতায়াত করেন। নিয়ম অনুযায়ী এসকল চিকিৎসকদের সকাল ৯টা থেকে হাসপাতাল চেম্বারে চিকিৎসা সেবা দেয়ার নিদেশনা রয়েছে। ডাক্তার সংকট ও সময় মত চিকিৎসকের উপস্থিতি না থাকায় উপজেলা বিভিন্ন এলাকার জনগন বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ফি’র বিনিময়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য হন।
প্রশাসনিক কাজ, ডেপুটেশন থাকায় হাসপাতালে রোগীদের অন্যান্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত ডাক্তার, নার্সদের। জনবল সংকটের কারনে পরিপূর্ন ভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে হাসপাতার কতৃপক্ষরা জানায়, এমন প্রতিকুলতার মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিতে মনিটরিং করার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান চারঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম ।
সরেজমিনে গিয়ে গত সোমবার প্রায় সাড়ে ১০ টার পরে হাসপাতালে আউটডোরে কোন চিকিৎসককে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায় নাই। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মইনুদ্দীনের ছেলে অপু জানান, এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার নাই বললেই চলে। সকাল থেকে টিকিট কেটে চিকিৎসকের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। এছাড়া দিনে কয়েকজন চিকিৎসকের দেখা মিললেও রাতে চিকিৎসকের দেখা মেলা ভার। এছাড়া দৈনন্দিন ঔষুধ বিতরনের তালিকা বোর্ড অনুযায়ী ঔষুধ বিতরন করা হয় না এবং তারিখ অনুযায়ী ঔষুধ তালিকা বোর্ড হালনাগাদ করা হয় না। ডাক্তারদের উপস্থিতিতে ভাড়াটে, বহিরাগত মেডিকেল এসিসটেন্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে চলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম বলে জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য প:প: কর্মকর্তা ডা: আশিকুর রহমান বলেন, ডাক্তার সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর চিকিৎসা সেবা সাময়িক ব্যহত হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর বিভিন্ন পদের ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও অপারেটরদের চাহিদা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে ৩জন জুনিয়র ডাক্তার অর্ডার পাশ হয়েছে। অতি শীঘ্রই চিকিৎসক সংকটের সমস্যা সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।