মাদকব্যবসায়ীর কৃষকলীগে, যুবদলেও || আত্মঘাতী প্রবণতা এখনই বন্ধ হোক

আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০১৭, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

রাজনীতিতে উদাসীনতা ও দুর্বৃত্তায়নের মাত্রাটা কত ভয়ঙ্কর রূপ পেয়েছে তা গোদাগাড়ী উপজেলার ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যায়। দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলার গোদাগাড়ী থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী। তিনি একটি ওয়ার্ডের কৃষকলীগের সভাপতি। একই সাথে তিনি ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। দেশের প্রধান দুইটি পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনে ওই মাদক ব্যবসায়ীকে সভাপতি করায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোদাগাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (মাদারপুর) যুবদলের সভাপতির পদ না ছেড়ে নতুন করে একই ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি হয়েছেন সেলিম নামের ওই মাদক ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষকলীগ আত্মপক্ষ সমর্থন করলেও পৌর যুবদল সেলিমকে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বলেই দাবি করেছেন, কেননা সেলিম তার পদ থেকে পদত্যাগ করে নি।
রাজনীতিতে কি না সম্ভব! নৈতিক স্থলন ঘটলে যে সুস্থ ধারার কিছু ভাবা যায় না- এসব ঘটনা তারই প্রমাণ দেয়। ভোট ব্যাংকের সুরক্ষা, ব্যক্তি আধিপত্য বিস্তারকে নিরঙ্কুশ করতে এবং কালো টাকা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে কাউকেই রাজনীতিতে জায়গা করে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে রাজনীতিতে সমাজের দুষ্ট লোকেরা মূল ধারার রাজনীতিতে খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারছে। এই প্রবণতা খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিকে ভীষণভাবে কলুষিত করছে এবং দলের দুর্বৃত্তরা তাদের খুঁটিকে শক্ত করছে। সমাজ নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা আসন পোক্ত করতে পারছে।
আওয়ামী লীগের মত একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দলে সমাজবিরোধী দুস্কৃতিকারীরা কীভাবে ঢুকে পড়ছেÑ তা নিয়ে তৃণমূলে কোনো ধরনের বিকার আছে বলে মনে হয় না। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও নাগরিক মহলে বেশ আলোচিত- সমালোচিত হচ্ছে বিষয়টি। মাদক ব্যবসায়ীসহ সমাজের ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোকেরা ছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধীরা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মত সংগঠনে জায়গা করে নিতে পারছেÑ এটা যে কতবড় উদ্বেগ ও আশংকার ব্যাপার তা গণতন্ত্রকামী মানুষ মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। এই প্রবণতা বাড়ছে এই কারণে যে, এ ধরনের কাজের জন্য কাউকে সাংগঠনিকভাবে জবাবদিহি ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। যে কারণে স্থানীয় নেতারা নিজের স্বার্থে সমাজবিরোধীদের সহজেই সংগঠনে জায়গা করে দিতে পারছে।
গোদাগাড়ীতে যারা এই কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত তারাও যে জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের উপলব্ধি এই যে, এই আত্মঘাতী প্রবণতা এখনই বন্ধ করা উচিৎ। শুধু তাই নয়- যে সব সমাজবিরোধী বা স্বাধীনতা বিরোধীরা আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বহিস্কারের উদ্যোগ দরকার। এতে করে যে শুধু সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষা হবে তাই নয়Ñ দেশের ভবিষ্যতের জন্য তা অত্যন্ত ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ