মাহী ইলাহি:উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের নৌ বাণিজ্য। সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া পর্যন্ত করা হয়েছে নৌরুট। এর মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠছে গোদাগাড়ীর মাদক কারবারিরা। গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জের আশেপাশের দখল নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সুলতানগঞ্জ মাদক ঘাট থেকে কিছুটা দূরেই শুরু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। সেখান থেকে শুরু মহানন্দা নদী। এই এলাকাকে বলা হয় নদীর মোহনা। নদীর ওপারে চর আলাতুলি। সুলতানগঞ্জের আশেপাশে আছে অনেক মাদক কারবারির বাড়ি। এছাড়াও আছে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পথ দিয়ে হেরোইন, ফেনসিডিল, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদসহ প্রবেশ করে। সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করানো হয় হেরোইন। ভারতের মাদক কারবারিরা নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে গোদাগাড়ীকে। বাংলাদেশের কারবারিদের জন্য নিরাপদ রুট গোদাগাড়ী। এখান থেকে সহজে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে মাদক।
মাদক পাচারের সব চেয়ে নিরাপদ রুটগুলো হলো- গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাঢ়িয়াদহ, মানিকচক, কানাপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোদালকাটি, আলাতুলি, ঝাইলাপাড়া, ক্লাবঘাট প্রভৃতি এলাকা। এই এলাকাগুলো সুলতানগঞ্জের কাছাকাছি। এখান থেকে মাদক এসে ঢুকে যাচ্ছে গোদাগাড়ী পৌরসভার সিঅ্যান্ডবি মোড়, গড়ের মাঠ, মাদারপুর, হাটপাড়া, রেলওয়ে বাজার, কুঠিপাড়া, শিবসাগর ও বারুইপাড়া এলাকায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব এলাকায় প্রায় অভিযান পরিচালনা করে। তবে রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে নিজ বাড়ি অথবা অন্যের বাড়িতে ভাড়া হিসেবে রাখেন তারা। পরে তা সুযোগ মতো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এ কাজের জন্য যুক্ত করা হচ্ছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা পড়ুয়া কতিপয় ছাত্রছাত্রী, গরুর রাখাল, সুন্দরী তরুণী-কিশোরী ও গৃহবধূ। মূলত তাদের দিয়ে পাচার করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য। এসব মাদক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পৌছে দেওয়া হয়। মাদকদ্রব্য পাচার, ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ।
তবে রাঘববোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেফতার হয় চুনোপুঁটিরা। মাদক কারবারের সাথে জড়িত থেকে গোদাগাড়ীতে কোটিপতি হয়েছেন কয়েকশো ব্যবসায়ী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় নাম আছে প্রায় ২০০ কারবারির। এর মধ্যে আছে- চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও কথিত ব্যবসায়ীরা। অনেক মাদক কারবারি নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছে। এদের শত শত এজেন্ট কাজ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জকে ঘিরে নতুন ধারণায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, এখানে নৌবন্দর হলে এর দখল যেতে পারে মাদক কারবারিদের হাতে। তারা পণ্য পরিবহনের আড়ালে সহজে মাদক বহন করতে পারবে। বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যাবে। এছাড়াও অনেকেই ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট নিয়ে মাদকের ব্যবসা করতে পারে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মাদক ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে রাজি না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থানে আছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এখানকার মাদক কারবারিরা এটা নিয়ে সক্রিয় আছে। সুলতানগঞ্জ এলাকায় কারো কারো ইটভাটাও আছে। খাস জমি দখল নিয়ে ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পরিবহনের সাথে যুক্ত আছে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি।
স্থানীয় কৃষক আবদুর রহমান বলেন, সুলতানগঞ্জ এলাকায় আছে অনেক মাদক কারবারি। তারা পুলিশের তালিকাতেও আছে। এদের পুলিশ কখনও ধরতে আসে না। এখানে নৌবন্দর হলে তারা সবই নিয়ন্ত্রণ করবে। এর পেছনে কতিপয় স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও কাজ করবে। কারণ জনপ্রতিনিধিরা এর দখল নিতে পারলে মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা পাবে তারা।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মাদক নিয়ন্ত্রণ সভা আছে। নৌবন্দর নিয়ে আমরা বেশ সতর্ক অবস্থানে আছি। কোনো মাদক কারবারি যেন ঘাটের দখলে না থাকে আমরা সেদিকে খেয়াল রাখবো। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দৃষ্টিও থাকবে। কেউ নিতে আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, আমরা কোনো মাদক কারবারিদের ছাড় দেব না। গোদাগাড়ীতে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। তবুও কিছু মাদক কারবারি জামিনে বের হয়ে আসছেন। আর বেশি হেরোইন ধরা পড়লে তারা বের হতে পারছেন না। আমরা আশাবাদী গোদাগাড়ী থেকে অচিরেই মাদক কারবারিরা নির্মূল হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সুলতানগঞ্জ মাদক পাচারের একটি পয়েন্ট। সেখানে নৌবন্দরকে ঘিরে মাদক কারবারিরা সক্রিয় বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছি। সোমবার প্রতিবেদনটি সুরক্ষা বিভাগে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে আমাদের গোয়েন্দারা সেখানে নজরদারি শুরু করেছে। অন্য সংস্থাগুলোও নজরদারি বাড়াবে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি নৌবন্দর নিয়ে। কেউ যেন মাদক নিয়ে দেশের অন্য স্থানে না পৌঁছাতে সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। একই আমরা সীমান্তেও নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।