মাদক ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনের শপথ ।। পুলিশের এই উদ্যোগের সফলতাই কাম্য

আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০১৬, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ৪০ জন মাদক ব্যবসায়ী ও এক কঙ্কাল চোরাচালানিকে অবৈধপন্থা পরিত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে শপথ করিয়েছেন। তারা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এ শপথ নেন।
সোমবার পদ্মানদীর ওপারে চরমাঝাড়দিয়াড় এলাকায় এ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চর মাঝাড়দিয়াড় কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি। এ সময় রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। ওই অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারীরা পুলিশের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষরও করেন। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে সাক্ষি হিসেবে স্বাক্ষর করেন। আত্মসমর্পণকারীরা কথা দেন, কখনোই তারা আর অন্ধকারের পথে পা বাড়াবে না। পুলিশের পক্ষ থেকেও তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় এসময় কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।
পুলিশ কমিশনার, শপথগ্রহণকারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যদি রিকশা-ভ্যান চালাতে চান, পুলিশের পক্ষ থেকে কিনে দেয়া হবে। ছোট-খাটো চাকরি চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সুপারিশ করে তার ব্যবস্থা করা হবে। তবে কারও নামে মামলা থাকলে সেগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলবে।
রাজশাহী মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ভূমিকা জনমনে বেশ প্রশংসনীয় হচ্ছে। দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ যা মানুষকে ইতিবাচকভাবে ভাববার সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমান পুলিশ কমিশনার রাজশাহীতে যোগদান করার পর মাদক বেচাবিক্রির প্রতি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। অবশ্য এ ধরনের ঘোষণা নতুন কিছু ছিল না। এর আগের পুলিশ কমিশনারগণও মাদক বন্ধে নগরবাসীর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেনÑ কিন্তু ওই পর্যন্তই। মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম মোটেও কমানো যায় নি। বর্তমান পুলিশ কমিশনারের উদ্যোগের ফলে যে মাদক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ব্যাপারটি তেমন নয়। এটা একটি উদ্যোগ যা নগরবাসীকে উৎসাহিত ও আশান্বিত করছে। একদিনেই সমস্যার সমাধান হবে ব্যাপারটি তেমন নেই। এই উদ্যোগের একটা ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকতে হবে। খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন যে, বর্তমান কমিশনার বদলি হলে এই উদ্যোগ থাকবে কি? এখানেই অনিশ্চয়তাটা থেকেই যায়। এই অনিশ্চয়তাই সিস্টেমের বড় দুর্বলতা যা শান্তিপ্রিয় মানুষকে মাদকবিরোধী সামজিক আন্দোলনে দারুণভাবে নিরুৎসাহিত করে। কেননা ওই অনিশ্চয়তার ব্যাপাটি এমন যে, উদ্যোগী- কৌতুহলী মানুষ হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হতে পারেন। সেটা মাদক ব্যবসায়ীদের দিক থেকেও আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকেও। এটি পরস্পর আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপার। এ ধরনের পরিবেশ অত্যাশ্যক মাদকের বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণ সৃষ্টিতে। এককভাবে পুলিশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। আবার এককভাবে একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রচেষ্টার ব্যাপারও এটি নয়। মহতী এই উদ্যোগকে মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রহণ করছে কিনা সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্দেহ নেই ব্যক্তির অনেক প্রচেষ্টাই পথ দেখায়, মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, সম্মিলিত কর্মউদ্যোগ সৃষ্টি করে। বর্তমান পুলিশ কমিশনার সেই প্রশংসনীয় কাজটিই করে যাচ্ছেন। তাঁর এই উদ্যোগকে আমরা প্রশংসা করি, স্বাগত জানাই। তাঁর এই উদ্যোগ কিছু পুলিশ সদস্যের মধ্যে, মাদক ব্যবসায়ীদের ভালবোধে সঞ্চারিত করতে পারলেও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে।