মান্দায় চার চুরি, সবই সিনজেনটার দোকানে!

আপডেট: মার্চ ৩, ২০১৭, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

জিল্লুর রহমান, মান্দা


নওগাঁর মান্দায় গত দুই মাসে চারটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সব চুরিই সংঘটিত হয়েছে সিনজেনটা কোম্পানির নির্ধারিত কীটনাশকের দোকানে। চার দোকানির একজন হলেন সিনজেনটার ডিলার, অপর তিনজন রিটেলার (খুচরা বিক্রেতা)। একই কোম্পানির দোকানে চুরির এসব ঘটনা রহস্যের সৃষ্টি করেছে। মামলা হলেও এসব ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে নি পুলিশ।
তথ্য সন্ধানে জানা গেছে, গত সোমবার গভীর রাতে উপজেলার সতীহাটে মেসার্স চারভাই ট্রেডার্স নামে সিনজেনটা কোম্পানির ডিলার উত্তম কুমার সরকারের গোডাউনে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়। চোরের দল দোকান ঘরের সামনের রাস্তায় ট্রাক ভিড়িয়ে তিনটি দরজার ৭টি তালা ভেঙে ১৪ লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। ডিলার উত্তম কুমার জানান, ওইদিন দুপুরে তিনি ১০ লক্ষাধিক টাকার মাল গুদামজাত করেছিলেন।
এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি (সোমবার) গভীর রাতে উপজেলা ভোলাবাজারে মেসার্স শাকিল ট্রেডার্স নামে সিনজেনটা রিটেলার (খুচরা বিক্রেতা) আরফানুল হক ওরফে আইয়ুবের দোকানে ট্রাক ভিড়িয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করা হয়। নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের ধারে চুরির এ ঘটনায় দোকান মালিক আইয়ুব নৈশ প্রহরী শহিদুল ইসলাম এবং ওই রাতে পাহারার দায়িত্বে থাকা দোকানি কালীপদকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে নওগাঁ জেল-হাজতে পাঠায়। বর্তমানে তারা হাজতবাসে রয়েছেন। আইয়ুব আলী দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি ৫ লাখ টাকার মালামাল কিনে দোকানে তুলেছিলেন।
এছাড়া ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) গভীর রাতে উপজেলার ভারশোঁ লক্ষ্মীর মোড়ে মেসার্স জেপি ট্রেডার্স নামে সিনজেনটা রিটেলার জীবন কুমারের দোকান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। চোরেরা দোকানঘরের সিড়ি ঘরের ইট খুলে এ চুরি সংঘটিত করে। তিনিও চুরির দিন সিনজেনটা কোম্পানির চৌবাড়িয়া ডিলারের নিকট থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার মাল কিনে দোকানে মজুদ করেছিলেন।
একইভাবে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার সাতবাড়িয়া মোড়ের এম ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী আকবর আলীর দোকান থেকে ৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার মাল লুট করে নিয়ে যায় চোরের দল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সতীহাট ও ভোলাবাজারের দুটি দোকানে একই কায়দায় চুরি সংঘটিত হয়। ট্রাক নষ্ট হওয়ার অজুহাতে চালকসহ সহযোগিরা নৈশ প্রহরীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। পরে ট্রাক মেরামতের বাহানায় চা ও বিস্কুট খাইয়ে তাদের অজ্ঞান করে গভীর রাতে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। সূত্র মতে, যেদিন দোকানে সিনজেনটা কোম্পানির মালামাল মজুত করা হয় সেদিন রাতেই চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির এসব ঘটনা রহস্যজনক বলে দাবি করছেন স্থানীয় একাধিক সূত্র।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত ডিলার ও দোকান ছাড়া অন্য ব্যসায়িদের নিকট সিনজেনটা কোম্পানির কোনো কীটনাশক পাওয়া সম্ভব নয়। ইচ্ছে থাকলেও যেকোনো দোকানদান এ কোম্পানির কীটনাশক বিক্রি করার এখতিয়ার রাখে না। এজন্য চুরি যাওয়া মালামাল কোম্পানির নির্ধারিত ডিলার ও দোকানেই কেবল বিক্রি হওয়া সম্ভব, অন্য কোথাও নয়। কীটনাশক ব্যবসায়িরা দাবি করেন, কোম্পানির মাল ভেলিভারির দিনই একইভাবে চুরির ঘটনা রহস্যের।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান এসব চুরি ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, একটি কোম্পানির নির্ধারিত দোকানে একের পর এক চুরির ঘটনা রহস্যের। তবে পুলিশ এ রহস্যের উদ্ঘাটন করবে অচিরেই। সন্দেহের সূত্র ধরেই চলছে তদন্তের কাজ।