মারধর করে ছিনিয়ে নিয়েছে তাফসিরের আদায়ের টাকা II শিবগঞ্জে বেড়েই চলেছে ডাকাতির ঘটনা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ণ

শিবগঞ্জ প্রতিনিধি:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বেড়েই চলেছে ডাকাতির ঘটনা। যেনো কোন-ই ভাবে থামানো যাচ্ছে না এই ডাকাতির ঘটনা। সন্ধ্যা-রাত কিংবা ভোর ঘটছে ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা। ঠিক এমন-ই ডাকাতির ঘটনায় তাফসিরের জন্য আদায়কৃত টাকা নিয়ে নিজ এলাকায় যাওয়ার পথে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতের দল। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত প্রায় সাড়ে ৮ টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের মুসলিমপুর-টাকশাল দীঘি নামক এলাকায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এছাড়া শনিবার ভোর ৬টার দিকে একই এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো ডাকাতের কবলে পড়েন ঢাকা থেকে বাড়িমূখি মানুষরা। সকাল-সন্ধ্যায় ডাকাতির ঘটনা নিয়ে পথচারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিন ডাকাতির ঘটনার ঘটলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্ন করছেন ভূক্তভোগীরা। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ তাহলে কি পুলিশ এসব ডাকাতির ঘটনায় জড়িত?

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক মাসে শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের উত্তর থেকে মুসলিমপুর মুসলিমপুর-টাকশাল দীঘি এলাকায় এবং মুসলিমপুর বাজারের ২’শ মিটার উত্তর থেকে মুসলিমপুর টোলবক্স বাঁকে এসব ডাকাতির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এদিকে, শুক্রবার রাত ও শনিবার ভোরে ডাকাতির শিকারে এক শিশুসহ আহত হয়েছেন ৯জন।

আহতরা হচ্ছেন, শাহবাজপুর ইউনিয়নের ১৯ বিঘী গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে আলাউদ্দিন(৬৫), একই গ্রামের আনেস আলীর ছেলে আব্দুল(৬০), এজাবুল হকের ছেলে গোলাম মোস্তফা(৫০), গাজলুর রহমানের ছেলে ফজলুর রহমান(৪২), তারিফ আলীর ছেলে শাহজাহান আলী(৫২), উপর চাকপাড়া গ্রামের এজাবুল হকের ছেলে জেম(৪০), নতুন ১৯ বিঘী গ্রামের সেন্টু আলীর ছেলে শিশু মো. সিয়াম আলী(১২)। তাঁরা সকলেই তাফসির মাহফিলের জন্য টাকা আদায় করতে গিয়েছিলেন বলে জানান।

আহত শিশু সিয়াম অভিযোগ করেন, আমরা ডাকাতি ঘটনার ১০/১৫মিটিন পর একটি সিএনজিতে করে পুলিশ আসলে আমাদের জিজ্ঞাসা করে এখানে কি হয়েছে? আমি বলেছি ডাকাতি হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ওই সিএনজি না থেকে চলে যায়। মো. আলাউদ্দিন, মো. আব্দুল, গোলাম মোস্তফা, ফজলুর রহমান ও শাহজাহান আলী বলেন, আমাদের তাফসিরের জন্য কানসাট, ত্রিমোনী বাজার, আব্বাস বাজারে আদায় করতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরে ভানগাড়িতে শিশু সিয়ামসহ আমরা ৭জন বাসা ফিরছিলাম।

এমন সময় পথের মধ্যে বড় বড় হাঁসুয়া ও কাতা নিয়ে শাহবাজপুর ইউনিয়নের মুসলিমপুর-টাকশাল দীঘি নামক এলাকায় রাস্তার দু’পাশে দড়ি বেঁধে পথরোধ করে এবং আমাদের মারধর করে সাথে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এর আগেও এখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুলিশ কোন নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আমাদের সন্দেহ হয়, তাহলে পুলিশ এসব ডাতাকির ঘটনার সাথে জড়িত? কেনো না, ঘটনার প্রায় ১৫মিনিট পর একটি সিএনজিতে পুলিশ আসলো, শুধু গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেই চলে গেলো? আর কোন তথ্য নিলো না কেন?

এছাড়া শনিবার ভোরে ডাকাতির কবলে পড়েন ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা এক রাজমিস্ত্রি। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের শুকুরুদ্দিনের ছেলে রুবেল(২৫)। তিনি জানান আমরা অটোরিক্সায় ৭জন আসছিলাম। মুসলিমপুর টোলবক্স বাঁকে আমাদের আটকে দেয় ডাকাত দল। তারা সবাই মুখে গামছা বেধে রেখেছিলা। তাদের হাতে বড় বড় হাসুয়া আর লাঠি ছিল। আমাদের মারধর করে। আমার সাথে থাকা স্মার্ট ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গত সোমবার রাত আনুমানিক ৮টায় শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের মুসলিমপুর নামক এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়ে ২ যুবককে কুপিয়ে জখম করে তাঁদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আহত যুকবদ্বয় হচ্ছে, শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের তেলকুপি বিশ^াসটোলা গ্রামের মো. সেন্টু আলীর ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন(৩২) এবং শিবগঞ্জ পৌর এলাকার কোট বাজার বাসিন্দা (জন্মস্থান নাচোল পৌর এলাকার পুকুরপাড়া)’র দুরুল হোদার ছেলে মো. নেয়াজ মুরশেদ(২১)।

এছাড়াও ডাকাতির হাত থেকে রক্ষা পাননি নলডুবরী শাহবাজপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. এনামুল হক ও আজমতপুর দারুল উলম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. সাদিকুল ইসলাম। তাঁর দু’জন অফিসিয়াল তাজ শেষ করে গত ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ওইদিন ভোর ৬টার দিকে তাঁরা ডাকাতের কবলে টাকা ও মোবাইল ফোন হারিয়েছেন বলে জানান।

এদিকে, শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন সাইম জানান, গত এক মাসে অন্তত ১৫/১৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সাধারণ মানুষ ডাকাতির আতঙ্কে রয়েছে। নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করা মুশকিল হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে ডাকাতির ঘটনার ঘটার পর এক ডাকাতকে হাতেনাতে আটক করে স্থানীয়রা। ডাকাতকে আটকের পর পুলিশকে জানানো হলেও তা কোন ব্যবস্থা নেননি। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এই রাস্তায় ডাকাতির কবল থেকে নিরাপত্তার দাবি জানান।

এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের পুলিশ প্রতিনিয়ত টহলে রয়েছে। ডাকাতির ঘটনাটি যারা ঘটনাচ্ছে তারা প্রকৃত মাদকসেবী। মাদকের জন্য টাকা না থাকায় তারা এই ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ এসবের সাথে জড়িত না, ভূক্তভোগীরা যে অভিযোগ করেছেন তা সরল মনে করেছেন।

তিনি আরও জানান, আগের তুলনায় অনেকটা ডাকাতি-ছিনতাই কমে এসেছে। ইতোপূর্বে ডাকাতির গ্যাং গ্রুপের গ্যাং প্রধান আহসান ঠুঠা সহ ৪জনকে আটক করে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সকল অপরাধীকে আটক করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।