রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
মার্কিন হামলার জবাব ইরান কীভাবে দেবে তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। এ বিষয়ে তেহরানের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র গবেষক আবাস আসলানীর সঙ্গে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আবাস আসলানীর মতে, মার্কিন হামলার পর ইরান সম্ভাব্য তিনটি পরিস্থিতি অনুসরণ করতে পারে।
তিনি বলেন, “প্রথমত ক্ষতির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সীমিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ ছাড়াও, এটি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি প্রবেশ। ইরান আগেই সতর্ক করে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিলে তারা সেই পদক্ষেপের জবাব দেবে।”
তিনি আরো বলেন, “দ্বিতীয় পরিস্থিতিটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হতে পারে, যেখানে ইরান মার্কিন স্বার্থের পাশাপাশি ইসরায়েলি স্বার্থের বিরুদ্ধে গুরুতর আক্রমণে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করবে। এর মধ্যে ইসরায়েলি পারমাণবিক স্থাপনা সহ বিস্তৃত লক্ষ্যবস্তু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং ইরানের মিত্ররা এতে যোগ দিতে পারে।”
তিনি আরো যোগ করেন, “তৃতীয় বিকল্পটি হলো ইরান এ অঞ্চলে পশ্চিমা শক্তির ভারসাম্যকে অবরুদ্ধ করার জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রকে চিরস্থায়ী পরিণতির হুঁশিয়ারি ইরানের
ইরানে মার্কিন হামলার পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। খবর আল জাজিরার।
রবিবার (২২ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে আরাঘচি বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে। তারা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটিতে) স্বাক্ষরকারী হয়েও ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলা চালিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আজ সকালের ঘটনা ভয়ঙ্কর এবং এর চিরস্থায়ী পরিণতি হবে। এই ধরনের বিপজ্জনক, বেআইনি ও অপরাধমূলক আচরণে প্রতিটি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।”
আরাঘচি স্পষ্ট করে জানান, “ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ ও জনগণকে রক্ষা করতে “সমস্ত বিকল্পই উন্মুক্ত রাখছে।”
ইরানে হামলার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ট্রাম্পের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল ৮টা) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন।
ট্রাম্পের প্রায় ৩ মিনিটের পূর্ণাঙ্গ ভাষণটি প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। ট্রাম্পের ভাষণটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-
“কিছুক্ষণ আগে, মার্কিন সেনাবাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা- ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানে বিশাল নির্ভুল হামলা চালিয়েছে। ইরান ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক প্রকল্প শুরু করার পর থেকেই সবাই বছরের পর বছর ধরে এই নামগুলো শুনে আসছে।
আমাদের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং বিশ্বের এক নম্বর রাষ্ট্র সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক দ্বারা সৃষ্ট পারমাণবিক হুমকি বন্ধ করা।
আজ রাতে, আমি বিশ্বকে জানাতে পারি যে, ইরানে মার্কিন হামলাগুলো ছিল একটি অসাধারণ সামরিক সাফল্য। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দালাল ইরানকে এখন শান্তি স্থাপন করতে হবে।
যদি তারা তা না করে, তাহলে ভবিষ্যতের আক্রমণগুলো অনেক বড় ও অনেক সহজ হবে।
৪০ বছর ধরে, ইরান বলে আসছে, আমেরিকার মৃত্যু, ইসরায়েলের মৃত্যু। তারা আমাদের জনগণকে হত্যা করছে, তাদের হাত উড়িয়ে দিচ্ছে, রাস্তার পাশে বোমা মেরে তাদের পা উড়িয়ে দিচ্ছে- এটাই ছিল তাদের (ইরানের) বিশেষত্ব।
আমরা এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হারিয়েছি এবং মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ইরানের ঘৃণার সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় মারা গেছে, বিশেষ করে তাদের জেনারেল কাসেম সোলেইমানের হাতে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে।
আমি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি এটা হতে দেব না। এটা আর চলবে না।
আমি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিবি নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা এমন একটি দল হিসেবে কাজ করেছি। সম্ভবত এর আগে কোনো দল এতটা কাজ করেনি এবং ইসরায়েলের জন্য এই ভয়াবহ হুমকি মুছে ফেলার জন্য আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
আমি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে তাদের দুর্দান্ত কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমি সেই মহান আমেরিকান দেশপ্রেমিকদের অভিনন্দন জানাতে চাই যারা আজ রাতে এই দুর্দান্ত স্থাপনাগুলো উড়িয়েছেন এবং সমস্ত মার্কিন সামরিক বাহিনীকে এমন একটি অভিযানের জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই যা বিশ্ব বহু, বহু দশকে দেখেনি।
আশা করি, আমাদের এই সামরিক ক্ষমতা আবার দেখানোর প্রয়োজন পড়বে না। আমি আশা করি তাই হবে।
আমি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান রাজিন কেইন- তিনি একজন অসাধারণ জেনারেল এবং এই আক্রমণে জড়িত সকল মেধাবী সামরিক মনকে অভিনন্দন জানাতে চাই।
এত কিছুর পরেও, এটি চলতে পারে না।
ইরান হয় শান্তিতে আসবে, নয়তো গত আট দিনে আমরা যা দেখেছি তার চেয়েও বড় ট্র্যাজেডি হবে।
মনে রাখবেন, এখনও অনেক লক্ষ্যবস্তু বাকি আছে। আজ রাতের আক্রমণ ছিল সবচেয়ে কঠিন ও সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক। কিন্তু ইরান যদি দ্রুত শান্তি আলোচনায় না আসে, তাহলে আমরা নির্ভুলতা, দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে ইরানের অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুগুলোতেও আঘাত করব।
ইরানের বেশিরভাগই কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধ্বংস করা যেতে পারে।
পৃথিবীতে এমন কোনো সেনাবাহিনী নেই যে, আজ রাতে আমরা যা করেছি তা করতে পারে, এমনকি কাছাকাছিও নয়। এমন সেনাবাহিনী বিশ্বে কখনো তৈরি হয়নি, যা মার্কিন সেনাবাহিনী কিছুক্ষণ আগে করেছিল তা করতে পারে।
আগামীকাল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জেনারেল কেইন সকাল ৮টায় পেন্টাগনে একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন এবং আমি সকলকে, বিশেষ করে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
আমি শুধু বলতে চাই, ঈশ্বর, আমরা তোমাকে ভালোবাসি এবং আমরা আমাদের মহান সেনাবাহিনীকে ভালোবাসি। তাদের রক্ষা করো। ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যের ওপর আশীর্বাদ করুন।
ঈশ্বর ইসরায়েলের ওপর আশীর্বাদ করুন এবং ঈশ্বর আমেরিকার ওপর আশীর্বাদ করুন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”
ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি’: ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি’ বলে দাবি করেছেন ওই এলাকার ইরানি এমপি। খবর আলজাজিরার।
ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি ইরানের কোম শহরে অবস্থিত। রবিবার ওই এলাকার এমপি রাইসি বলেন, “ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনার উপর মার্কিন আক্রমণটি ছিল ‘উপরের দিকে’।”
রাইসি বলেন, “সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে, আমি বলছি যে, মিথ্যাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবির বিপরীতে, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বেশিরভাগই কেবল মাটিতে ছিল, যা পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে।”
তিনি আরো জানান, মার্কিন হামলার পরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের কোনো লিকেজ শনাক্ত করা হয়নি।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ফোরডোতে মার্কিন হামলার পর স্থানীয়রা ‘বড় বিস্ফোরণের কোনো লক্ষণ অনুভব করেনি’।
সংস্থাটি জানিয়েছে, “এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। ঘটনার আরো বিশদ বিবরণ সরকারি বিশেষজ্ঞরা জানাবেন।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ফোরদো সহ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন। তবে হামলার প্রভাব সম্পর্কে কোনো স্বাধীন নিশ্চিতকরণ তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইরানি কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলার আগেই ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে এই হামলা কীভাবে প্রভাব ফেলবে তা স্পষ্ট নয়।
ইরানের যেকোনো প্রতিশোধের কঠোর জবাব দেওয়া হবে: ট্রাম্প
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ঘটনায় তেহরান প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলে দেশটিতে আরো বড় হামলার হুশিঁয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, “ইরানের যেকোনো প্রতিশোধের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।” খবর আল জাজিরার।
রবিবার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, “আজ রাতে যা দেখা গেছে তার চেয়েও বেশি শক্তি দিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে ইরানের যেকোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে।”
ইরানে আরো হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
শান্তি স্থাপন না হলে ইরানে আরো হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, “দেশটিতে আরো লক্ষ্যবস্তু বাকি রয়েছে।” খবর আল জাজিরার।
বাংলাদেশ সময় রবিবার (২২ জুন) সকাল ৮টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “হয় শান্তি স্থাপন হবে, না হয় ইরানের জন্য এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটবে। গত আট দিনে যা ঘটেছে, তার চেয়েও ভয়াবহ হবে।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “এখনও অনেক লক্ষ্যবস্তু বাকি রয়েছে। আজ রাতের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে কঠিন এবং সবচেয়ে বৈধ। যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা সেই অন্য লক্ষ্যবস্তুগুলোতেও আঘাত করব নিখুঁতভাবে, দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে।”
তথ্যসূত্র: রাইজিংবিডি