রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের অহেদপুর সীমান্তের বিশরশিয়া করিডোরের (খাটাল) মালিক আবুল হাসনাত চৌধুরী তিন মাস আগে মারা গেলেও সেটি অবৈধ দখলে নিয়ে গরু-মহিষ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা উঠাচ্ছে জামায়াত-বিএনপির সমর্থক হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটি চক্র। তারা ভারত থেকে আসা গবাদিপশু থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলে ভাগবাটোয়ারা করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব চাঁদার ভাগ যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের বড় নেতাদের কাছেও। চাঁদার একটা বড় অংশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নামে নিয়ে যাচ্ছে জনৈক মাসুদ। এই মাসুদের বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। অভিযোগ রয়েছে, বিজিবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত থাকার পরও করিডোরটি বন্ধ করেনি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে খাটালের গরু থেকে মোটা অংকের চাঁদা তোলা অব্য্হাত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
একইভাবে গরু মহিষের আড়ালে চক্রটি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চালাচ্ছে হুন্ডি ও ফেন্সিডিলের অবৈধ কারবার। সম্প্রতি এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও বিজিবি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা হাসনাত চৌধুরীর নামে বিশরশিয়া গরু মহিষের খাটালটির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল চলতি বছরের প্রথম দিকে। অস্থানীয় একজন ব্যক্তির নামে সীমান্ত খাটাল বরাদ্দ দেয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত প্রতিবাদ করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ গোলাম রাব্বানী। এসময় সাংসদ ভারতীয় গরু মহিষের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিলেও সেটি উপেক্ষিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, আবুল হাসনাত চৌধুরীর বাড়ি ঢাকার ধানমন্ডিতে হলেও সে কাগজপত্রে ভুয়া ঠিকানা হিসেবে পশ্চিম চরপাঁকা উল্লেখ করেন।
এদিকে পরে হাসনাত চৌধুরী খাটালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন কুষ্টিয়ার আব্দুস সামাদকে। অন্যদিকে সামাদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে খাটাল এলাকার চিহ্নিত হুন্ডি ব্যবসায়ী সিটু, ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তরিকসহ দুটি সিন্ডিকেটের লোকদের মধ্যে খাটালের মালিকানার কিছু অংশ অবৈধভাবে ভাগাভাগি করে একটি ভুয়া কাগজ তৈরি করে দেন।
এদিকে কিছুদিন আগে হেরোইন ও ইয়াবাসহ সামাদ রাজশাহীতে বিজিবির হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। সামাদের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো কয়েকটি মামলা। স্থানীয়রা সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ,৯ বিজিবি কর্তৃৃপক্ষ ও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাখিল করা অভিযোগে জানিয়েছেন, বিশরশিয়া খাটালের প্রকৃত মালিক হাসনাত চৌধুরী কয়েক মাস আগে ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হাসনাতের প্রতিনিধি সামাদও মাদক মামলায় জেলে আছেন। এ অবস্থায় ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তরিক, হুন্ডি ব্যবসায়ী সিটু, তার আত্মীয় আনারুল, জামায়াত নেতা শরীয়তুল্লাহ লাহুসহ দুটি সিন্ডিকেট খাটালটি দখল করে গরু মহিষ থেকে চাঁদা তুলছে। অভিযোগে জানা গেছে, হুন্ডি ব্যবসায়ী সিটু বিএনপির অর্থ যোগদানদাতা। তরিকুল ইসলাম তরিক ও তার ভাই সোহেল বিএনপির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে খাটালটি থেকে চাঁদা তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত নেতা লাহুর মাধ্যমে চাঁদার টাকা যাচ্ছে সংগঠনের উপরের পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের কাছে।
স্থানীয়রা ব্যবসায়ীরা আরো জানা যায়, গরু প্রতি খাটালের সার্ভিস ভাড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা হলেও তরিক-সিটু সিন্ডিকেট আদায় করছে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। এতে প্রতি রাতে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছেভ এখন দৈনিক এ খাটাল দিয়ে আড়াই থেকে ২ হাজার গরু মহিষ ভারত থেকে আনা হলেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে অর্ধেকের বেশি। খাটাল দখলকারীরাই গরু মহিষগুলি থেকে চাঁদা নিয়ে রাতের মধ্যে নদী পার করে দিয়ে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
জানা গেছে, রাতে যত গরু মহিষ আসে তা থেকে তোলা টাকার অর্ধেক নিয়ে যাচ্ছে জনৈক মাসুদ। মাসুদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঠিক রাখার নাম করে এ টাকা নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই খাটালের সঙ্গে মাসুদের কি সম্পর্ক তা কেউ জানেন না। মাসুদ কয়েকদিন পরপর ঢাকা থেকে পদ্মার চরে ছুটে গিয়ে টাকা নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে। মাসুদ চরে গিয়ে তরিকের বাড়িতে অবস্থান করছে।
গরু মহিষ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির বেশি চাঁদা উঠানো প্রসঙ্গে তরিকুল ইসলাম তরিক বলেন, বিভিন্ন অফিস ‘ম্যানেজ’ করতে হয় বলে টাকা নেয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বড় বড় অফিসারদের টাকা দিতে হয়। মন্ত্রণালয়কে ‘ম্যানেজ’ করতে হয়। নেতাদের টাকা দিতে হয়। কোন সরকারি কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয় প্রশ্ন করলে তরিক জানান, এটা মাসুদ ‘ম্যানেজ’ করে। সে বলতে পারবে।