মাল্টা চাষে রাবি শিক্ষার্থী ফাহিমের সাফল্য, ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা

আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ণ

সোহাগ আলী, রাবি:


ছোটোবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হবেন। একদিন এক শিক্ষকের বাসার ছাদে মাল্টা চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন। করোনা মহামারির মধ্যে যখন বাড়িতেই থাকতে হচ্ছিল, তখন শুরু করেন মাল্টা চাষ। ফলনের প্রথম বছরে সফলতা ধরা না দিলেও হতাশ হননি। চলতি মৌসুমে দশ লাখ টাকা মাল্টা বিক্রির আশা করছেন।
বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তরুণ উদ্দ্যোক্তা মো. ফারাদুজ্জামান ফাহিমের কথা। মাল্টা চাষে বাজিমাত করেছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি চারজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

ফারাদুজ্জামান ফাহিমের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার মির্জাগঞ্জ গ্রামে। তার বাবা ও মায়ের নাম মোজাম্মেল হক ও মোছা. ফরিদা বেগম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ফাহিম তৃতীয়। গ্রামের মির্জাগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। এখন সে বিএসএস (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।

ফাহিমের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে ৩.১৫ একর জমিতে ৯২০টি মাল্টা ও ৪০টি কমলার চারা রোপণ করেন। রোপণের দ্বিতীয় বছর আশানুরূপ ফলন না পেলেও হতাশ হননি তিনি। ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন ফলনের প্রথম বছরে। তবে চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে এবং ভালো ফলন হওয়ায় ১০ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানান এ তরুণ উদ্যোক্তা। চলতি বছরে ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন ফাহিম। এ মাল্টা সহজলভ্য হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানান এ উদ্যোক্তা।

ফারাদুজ্জান ফাহিম নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান। তার মাল্টা বাগানে চারজন শ্রমিক প্রতিনিয়ত বাগান দেখাশোনা ও পরিচর্যার কাজে কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়াও মৎস্য খামার এবং মাঠ ফসলের বিভিন্ন প্রজেক্টে ১০ জনের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তবে সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে কৃষিতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাহিম বলেন, ২০২১ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড পাবলিক কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় এক শিক্ষকের ছাদ বাগানে মাল্টা চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই,পরে সশরীরে বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করি এবং স্থানীয় ডোমার উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করি। তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আনিসুজ্জামান স্যারের পরামর্শক্রমে বাগান স্থাপন করি।
তিনি আরও বলেন, রোপণের দ্বিতীয় বছরে বাগানে সেভাবে ফলন না হলেও হতাশ হয়নি। এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি এবং আরও ৬-৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে ধারণা করছি।

ফাহিমের বাগান ঘুরতে এসে অভিভূত হন তার স্কুল শিক্ষক মো. দুলাল উদ্দিন। এমন উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ফাহিমের মাল্টা বাগানে গিয়ে আমি সত্যি অভিভূত হয়েছি। ৯ বিঘা জমির উপর অসাধারণ এক মাল্টা বাগান করেছে ফাহিম। মাল্টা গাছগুলো দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছিল। ফাহিম পরিশ্রমী একটা ছেলে। ছাত্রজীবনে পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বাংলাদেশের বেকারত্ব কমিয়ে নিয়ে আসবে- যা আসলেই প্রশংসার দাবিদার। সবাই যদি ফাহিমের মতো এমন আগ্রহী হয়ে উঠে, তাহলে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডোমার উপজেলার কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ফাহিম ডোমার উপজেলার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিন একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তার বাগানে প্রায় ১০০০টি বারি মাল্টা-১ জাতের গাছ এবং ১৫০টির মত কমলার গাছ আছে। এ বছর প্রায় ৫ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়াও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা প্রায়ই তার বাগান পরিদর্শন করেন। আমরা আশা করি, ফাহিমের মত তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই বদলে যাবে বাংলাদেশের কৃষি কার্যক্রম।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ