শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী পাটকলে প্রতি মেট্রিকটন পাটজাত পণ্যে লোকান গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। দৈনিক হিসেবে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। প্রতি মাসেই বাড়ছে লোকসান। প্রতি মাসে লোকসানের পরিমাণ কমপক্ষে ৭০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। পাটকল কর্তৃপক্ষের দাবি, সিবিএ নেতাদের অসহযোগিতাসহ নানান কারণে বাড়ছে লোকসান। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিবিএ নেতৃবৃন্দ।
রাজশাহী পাটকলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৬০ লুমের এ মিলটিতে প্রতিদিনের উৎপাদন ২১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন। হেসিয়ান (চিকন) ও সেকিং (মোটা) বস্তা প্রস্তুত হয় এখানে। সব মিলিয়ে কর্মরত প্রায় ১১শ শ্রমিক। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন। আর বদলি (কার্ডধারী) রয়েছেন আরো ৭৮৮ জন।
সূত্র মতে, রাজশাহী পাটকলে সবমিলিয়ে মিলে প্রতি মেট্রিকটন হেসিয়ান উৎপাদনে খরচ হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। ১৮ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে তা বিক্রি হয় ১ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। তবে সেকিং এ লোকসান হয় ২৭ হাজার টাকা। ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় উৎপাদিত প্রতি মেট্রিকটন সেকিং বিক্রি হয় ৮৪ হাজার টাকায়। সব মিলিয়ে পাটকলে প্রতিদিনই অন্ততঃ ৫ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ প্রতিষ্ঠাটির এ পর্যন্ত লোকসান প্রায় হাজার কোটি টাকা।
তবে এনিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় রাজশাহী পাটকল কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী পাটকলের প্রকল্প প্রধান (উপমহাব্যবস্থাপক) প্রকৌশলী জিয়াউল হকের ভাষায়, রাজশাহী পাটকলের কোন বিষয়ে মিডিয়ার সামনে তারা কথা বলতে পারবেন না। বিজিএমই সচিব মো. সালেহউদ্দিনের এক আদেশের কপিও দেখান তিনি। এবছরের ১০ এপ্রিল পাঠানো ওই চিঠিতে এনিয়ে সতর্ক করা হয়েছে তাদের।
তবে পাটকলে লোকসান হচ্ছে স্বীকার করে এ প্রকল্প প্রধান বলেন, মাসে অন্ততঃ ৭০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। কখনো কখনো তা কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায়। তিনি দায়িত্বভার নিয়েছেন ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর। ওই সময় মাসে লোকসান হতো ২৫ লাখ টাকার মত। নানান কারণে ধীরে ধীরে তা বেড়েছে।
তিনি বলেন, লোকসানের কারণে আর্থিক সংকটে রয়েছেন তারা। এতে বকেয়া পড়েছে শ্রমিকদের ৩ সপ্তাহের মজুরি। টাকার অংকে তা ছাড়িয়েছে ১০ কোটি ৫ লাখে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই পরিশোধ হবে এ অর্থ।
তিনি দাবি করেন, লোকসানের প্রধান কারণ অতিরিক্ত শ্রমিক মজুরি। প্রতি টন পাটপণ্য উৎপাদনে কেবলই শ্রমিকদের মজুরি বাবদ খরচ হয় ৪৫ হাজার ৫০২ টাকা। এছাড়াও প্রতিটন হেসিয়ান পাট কেনায় খরচ হয় ৫৪ হাজার ৪২৭ টাকা। অন্যান্য পণ্যে ৬ হাজার ৯১৫ টাকা এবং বেতন বাবদ ৯ হাজার ৪৮৪ টাকা খরচা হয়। বিশেষ করে শ্রমিক ব্যয় কমানো গেলে কমে আসবে উৎপাদন খরচ। কমবে লোকসানও। সিবিএ নেতাদের অসহযোগিতায় লোকসানের অন্যতম কারণ। এছাড়াও যন্ত্রাংশের কর্মদক্ষতা হ্রাস এবং অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়েও ভারি হচ্ছে লোকসানের পাল্লা।
অসহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী পাটকলের সিবিএ সভাপতি জিল্লুর রহমান তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পাটকলের কর্মপরিবেশ নেই। এটি তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব পাটকল কর্তৃপক্ষেরই। এছাড়া শ্রমিক সংকট রয়েছে। তবে অতিরিক্ত রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর পুরো দায় অদক্ষ ব্যবস্থাপনারই। কয়েকটি খাতে আর্থিক অনিয়মের ফলে লোকসান দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে রাজশাহী নগরীর উটকণ্ঠ শ্যামপুর এলাকায় স্থাপন করা হয় উত্তরাঞ্চলের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ পাটকল। ৪৯ দশমিক ০২ একর এলাকাজুড়ে এটি স্থাপন করেন শিল্প উদ্যোক্তা আব্দুল গফুর। স্বাধীনতার পর এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানে চলছে পাটকলটি।