মায়ের পরিচয়ে শিশুর শিক্ষার অধিকার আদালতের ঐতিহাসিক নির্দেশনা

আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, ১:০১ পূর্বাহ্ণ

দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ফরমে এখন থেকে অভিভাবকের ঘরে মা, বাবা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। সব ফরমে এই তিনটি বিকল্প বাধ্যতামূলকভাবে সংযুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ২০০৭ সালে করা একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) উচ্চ আদালত এই রায় দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এই রায় ঐতিহাসিক তাতে কোনোই সন্দেহের অবকাশ নেই। রাষ্ট্রকে ধারাবাহিকভাবে মানবিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই গন্য হবে।
একটা সময় ছিল শিক্ষা ফরমে শুধু পিতার নামই উল্লেখ করতে হতো। ২০০০ সালে সেখানে মায়ের নাম লেখাও বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে এখন থেকে শুধুমাত্র মায়ের পরিচয়েও যেকোনো সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবেন। এই রায় জন্মেরও স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি না থাকার কারণেই শত শত বছর ধরে শিশুর জীবন দুর্বিসহ হয়েছে, নির্দয়ভাবে তার অধিকার অস্বীকৃত হয়েছে। পিতৃতন্ত্রের শেকড় থেকে গজিয়ে ওঠা দৃষ্টিভঙ্গি কত মানব শিশু পরিচয় সংকটের কারণে সম্ভাবনার সমাপ্তি হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। কথিত বৈধতার মোড়কেই সমাজ এই নিষ্ঠুরতা ওই শিশুদের প্রতি যারা এর জন্য মোটেও দায়ি ছিল না- তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ ওইসব অবোধ শিশুদের প্রতি এমন কলঙ্ক ও দায় আরোপ করা হয়েছে যাতে কওে তাদের ভবিষ্যতের সব পথ বন্ধ করা ছিল। সমাজ তাদের শুধুই ঘৃণা করে গেছে, তাচ্ছিল্য দেখিয়ে গেছেÑ একইভাবে তাদের সমাজচ্যূত করেই ভাবতে অভ্যস্থ হয়েছে। বিশ্ব ক্রমশ মানবিক হচ্ছে মানুষের অধিকারের প্রশ্নে। আর এটি এমন এক মূল্যবোধ যা দেশের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপোস চলে না। একটি মানবিক সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে হবে মানুষকে মানুষ হিসেবে জ্ঞান করা। এটা বলা যায় যে উচ্চ আদালতের এই রায় মনুষত্বকেই মহীয়ান করেছে, মানুষকে মানুষ জ্ঞান করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। শিশুর অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই রায় সমাজের বিদ্যমান কুপম-কতার অবসানেও ভূমিকা রাখবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ