শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
মিরপুরে হুট করেই বিকট শব্দে বোমার বিস্ফোরণ! কিছুক্ষণের মধ্যে খেলোয়াড়রা জিম্মি! জরুরি তলবে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। জিম্মি হওয়া খেলোয়াড়দের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন সেনা সদস্যরা। কয়েক মিনিট ধরে চলে গোলাগুলি। কমান্ডো স্টাইলে ‘জিম্মিকারীদের’ ওপর আক্রমণ করে সেনাবাহিনী। ‘জিম্মিদশা’ থেকে মুক্ত করে খেলোয়াড়দের। এরপর ড্রেসিংরুম থেকে খেলোয়াড়দের হেলিকপ্টারে করে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ অবস্থানে। তাদের নিরাপদে পাঠিয়ে বাকি সদস্যরা স্টেডিয়াম শত্রুমুক্ত করার মিশনে নামেন।
না। এমনটা বাস্তবে ঘটেনি। বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে হয়ে গেল সেনাবাহিনীর আধঘণ্টা ধরে চলা কমান্ডো মহড়ার অংশ। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজে দুই দলের খেলোয়াড়দের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল এটা। দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া সেনাবাহিনীর আধঘণ্টার এ মহড়া একদিকে যেমন ছিল শ্বাসরুদ্ধকর, আরেক দিকে হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। মহড়ায় একটি হেলিকপ্টারে করে প্রায় ২৫ জন প্যারা কমান্ডো মিরপুর স্টেডিয়ামে নামেন। এরপর তারা তাদের কমান্ডো অভিযান চালান।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ সফলভাবে আয়োজনে পাশে থাকবে সেনাবাহিনী। যেকোনও নাশকতা মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে তারা। যেকোনও মুহূর্তে পুলিশকে সহায়তা দিতে সেনবাহিনী প্রস্তুত থাকবে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে জরুরি প্রয়োজনে ৩০ মিনিটের মধ্যে স্টেডিয়াম চত্বরে উপস্থিত হবেন এই কমান্ডোরা। বিশ্ববাসীর আস্থা ধরে রাখা ও আয়োজক হিসেবে সফলতার মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত করার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সিরিজের দায়িত্বে যুক্ত থাকবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এ ব্যাপারে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এম ইমরুল হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির যেকোনও প্রয়োজনে অবদান রাখতে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যেকোনও দায়িত্ব প্রদান করলে সেটা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা সব সময় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় চলমান বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র বিশেষায়িত ফোর্স ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন, বাংলাদেশ আর্মি এভিয়েশন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং সঙ্গে অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে একটা সার্বিক মহড়া এই মাত্র অনুষ্ঠিত হলো।’
বিশেষ কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব হলেই কেবল সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে আসবেন বলেন তিনি, ‘একটা কথা আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, সেটা হলো এই সিরিজ সংক্রান্ত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনও প্রয়োজনে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন অর্থাৎ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত আছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল অস্ট্রেরিয়া ক্রিকেট দলের। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরের অপরাগতা জানালে পরবর্তী সিরিজটির নতুন তারিখ নির্ধারিত হয়। সবকিছু স্বাভাবিক থাকায় শুক্রবার রাতে অজিরা বাংলাদেশ সফরে আসছে। মূলত অস্ট্রেলিয়া বিসিবির কাছে একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা চেয়েছিল এবং বাংলাদেশ সরকার অস্ট্রেলিয়া দলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগামী ২৭ আগস্ট মিরপুরে এবং ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে দুটি টেস্ট ম্যাচ হবে। এই সিরিজ খেলতে শুক্রবার রাতে ঢাকায় পা রাখার কথা স্মিথ-ওয়ার্নারদের। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে ২২ ও ২৩ আগস্ট দুই দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে অতিথিরা।-বাংলা ট্রিবিউন