মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখলেই গাদা গাদা নেতিবাচক খবর আমাদের দেখতে হয়, পড়তে হয়। দুর্নীতি, খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গিহানা, ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা ধরনের নেতিবাচক খবরে সংবাদ মাধ্যম ঠাসা থাকে। খবর এক ধরনের পণ্য। আর এই পণ্যের চাহিদাও পাঠক বা দর্শক মহলে এখনো ব্যাপক। চাহিদার নিরীখেই বোধ করি নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনে এক ধরনের ঝোঁক থাকে। উন্নয়নমূলক কিংবা ভাল দৃষ্টান্তের খবর খুবই কম পাঠক ও দর্শক পছন্দ করেন। তবে সময় পাল্টাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমেও চিন্তার পরিবর্তন আসছে এবং একইভাবে পাঠকের রুচিরও পরিবর্তন হচ্ছে। উন্নয়ন সাংবাদিকতা বাংলাদেশে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে ইতোমধ্যেই।
সমাজের স্তরে স্তরে দুর্বৃত্তায়ন জীবাণুর মত বাসা বেধেছে যেমনÑ তেমনি দুর্বৃত্তায়িত সমাজ থেকেই আলোর উদ্ভাস আমরা দেখতে পাই যা জাতিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পখ দেখায়। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার যে আকর্ষণ- অন্যের জন্য তা দৃষ্টান্ত ও অনুসরণীয় হয়ে ওঠে। সমাজের ভেতরের এই যে উদ্ভাবনী শক্তি, জানান দেয় জীবনঘনিষ্ট হতে, পরিশীলিত হতে, দায়িত্ববান হতে।
তেমনি একটি ভাললাগার খবরÑ ছোট একটি উদ্যোগ, কিন্তু ফলাফল যার অনেক বড়। এই ব্যাপকতার অর্থই হলো, অগ্রগতির, সমৃদ্ধির, অধ্যবসয়ের, আকাক্সক্ষা ও নতুন নতুন সৃষ্টির নির্দেশনা। এই নির্দেশনা অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, অন্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
শফিউল আলম মুক্তা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর গ্রামে তার বাড়ি। বন্ধু শরৎ চন্দ্রকে নিয়ে ২০১৪ সালে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে আটকে থাকা জলাশয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি মৎস্য অভয়াশ্রম। ওই বছর তার সফলতা তাক লাগিয়ে দেয় মৎস্য বিভাগকে। তারপর মুক্তার পাশে দাঁড়ায় মৎস্য বিভাগ। এলাকার আরও ৪০ যুবক সঙ্গী হয় তার। এখন সবার সহযোগিতায় মুক্তা বড় আকারে গড়ে তুলেছেন মৎস্য অভয়াশ্রম। এরপর ২০১৫ সালে অভয়াশ্রম করতে মুক্তার পাশে দাঁড়ায় মৎস্য বিভাগ। পরিধি বাড়ে অভয়াশ্রমের। ওই বছর পদ্মার ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয় অভয়াশ্রম। এই অভয়াশ্রম থেকে এখন ২৭ নদীতে যাচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় মাছের পোনা। আর স্থানীয় সাংসদ উদ্যোগ নিয়েছেন, ৩০ কিলোমিটার পদ্মার কোলেই ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের বিশেষ প্রকল্প গড়ে তোলার। এর ফলে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন রোববার দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
সত্যিই তো ছোট একটি উদ্ভাবন, তার পরিধি কত বড়। এমন ছোট ছোট অনেক উদ্ভাবনী প্রয়াস অর্থনীতি-উন্নয়নের ভাষাকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। বর্তমান সরকারে তো সে লক্ষ্য নিয়েই এগুতে চায়। সর্বস্তরের মানুষের মধ্য থেকেই উদ্ভাবনী শক্তি-সক্ষমতার সমাবেশ ঘটাতে চায়। সে লক্ষে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রশাসনের নি¤œ পর্যায়ে কর্মচারীর ইনোভেশনকে তা যদি জনগণের কল্যাণের জন্য হয় তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমলাতন্ত্রে নির্মম জটিলতা ভেঙ্গে জনসাধারণের সাথে সহজ বোধের সম্পর্ক বিনির্মাণের সিঁড়ি তৈরির চেষ্টা চলছে। মানুষের মধ্যেকার যে সম্ভাবনা আছে তাকে নিংড়ে বের করে আনতে উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে উন্নয়নের শর্ত হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। মানুষের সেরা কাজটি রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে অপাংক্তেয় হলে জাতির মেরুদ- সোজা হবে না। মুক্তাদের মত ছোট ছোট ইনোভেশনগুলো জাতীয় জীবনে কীভাবে বিস্তার ঘটানো যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য হতে হবে। কেবল তখনই আমরা ভাল খবরের জন্য সদা উদগ্রিব হব, সভ্য জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবোÑ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।