রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সাইফুদ্দীন চৌধুরী
একাত্তরে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাংলায় অনার্স নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বর্ষে উঠেছি। হলে তখনও সিট হয়নি, থাকি শিরইলে এক মেস ঘরে (ওই মেস ঘরের মালিক ছিলেন ইতিহাস গবেষক ও প্রাক্তন পুলিশ অফিসার মাহবুব সিদ্দিকী সাহেবের পিতা)। ঢাকার একটি দৈনিকে সাংবাদিকতা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে, স্থানীয় রেডিওতে অনুষ্ঠান করি। অনুষ্ঠান বলতে তখন দুপুর দুইটার উর্দু খবরের পর ‘অন্তরঙ্গ’ নামে একটি গল্প পাঠের আসরে নিজের লেখা গল্প পড়া। আমার শিক্ষক জুলফিকার মতিন, শেখ আতাউর রহমান, অসিত রায় চৌধুরী এবং অগ্রজ প্রতিম সতীর্থ আলমগীর রহমান এবং আমি ছিলাম ওই আসরের নিয়মিত গল্পকার।
বিভাগে গিয়ে পিওন ইদ্রিস ভাই রেডিওর চিঠি দিলেন, ২৯ মার্চ আবার আমার গল্পপাঠের অনুষ্ঠান। দেশে তখন অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল। এই সময় গল্প পড়তে যাওয়া ঠিক হবে কি না? আমার দুই সতীর্থ শহীদুল হক (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. শমসের আলীর ভাই, সংবাদকর্মী ছিলেনÑ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন) এবং রাজশাহী রেডিওর গায়ক গীতিকার প্রয়াত রেজওয়ানুল হক রমা বললেন, তোমার অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিৎ। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হলো, রহমানিয়া হোটেলের পাশের মুসলিম কর্মাশিয়াল ব্যাংকের বারান্দায় ২৬ মার্চ তারিখে অজ্ঞাত যে যুবক পাঁক-সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছিলোÑ তাকে নিয়েই গল্প লিখতে হবে। গল্প লিখে ফেললাম। তখন রেডিওতে আজকের মতো অনুষ্ঠান বাণীবদ্ধ করার ব্যবস্থা খুব একটা ছিলো নাÑ সরাসরি গিয়ে অনুষ্ঠান করতে হতো। তবে বিধান ছিল অন্তত ২/১ দিন আগে পা-ুলিপি জমা দিতে হবে। পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে গল্প লিখেছি, অনুষ্ঠানে যাব কি না দ্বিধায় পড়ে গেলাম আমি।
২৭ মার্চ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খান ঘোষণা করলেন, পরদিন সকল কর্মচারীকে তাঁদের কর্মস্থলে যোগদান করতে হবেÑ অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন্ধুরা বললেন, তোমাকে গল্প পড়তে রেডিওতে যাওয়াই কল্যাণকর হবে।
২৮ মার্চ সকালে আমি শিরোইল থেকে হেঁটে সাহেববাজার গেলাম। রাস্তায় লোকজন খুবই কম। কলেজিয়েট স্কুলে গিয়ে দেখলাম খানতিনেক রিক্সা আর একটা মাত্র ঘোড়াগাড়ি দাঁড়ানো। রিক্সা করে মিশন হসপিটালে যাবার জন্য একজন যাত্রী বসে আছেন, সহযাত্রীর অপেক্ষায়। আমি তার সঙ্গী হলাম। রিক্সায় রেডিও ভবনে যেতে পথে একটা দুটা রিক্সা এবং সেনাবাহিনী এন্টেনা লাগানো গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন চোখে পড়লো না।
রিক্সা থেকে নেমে রেডিওর গেটে ঢুকতেই (খদ্দরের পাঞ্জারি-পাজামা পড়া ছিলো বলেই কিনা জানিনা) একজন সেনা সেপাই হাত ধরে হ্যাচকা টান মেরে ভেতরে নিয়ে রিসিপসন ঘরে দাঁড় করালো। উর্দু কি পাঞ্জাবি ভাষায় কয়েকটি বাক্য একটি কাগজে লিখে রিসিপসন কর্মী একজনের সঙ্গে আমাকে ভেতরে আরডিএ’র কক্ষে পাঠালেন। তখন আরডিএ ছিলেন সম্ভবত সাইফুল্লাহ নামে এক ভদ্রলোক। তাঁর কক্ষে তখন তিনি ছাড়া তিনজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা বসা। বুঝলাম অনুষ্ঠানের ঈড়হঃৎধপঃ ষবঃঃবৎ এর বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-বার্তা হচ্ছেÑ উর্দু এবং মাঝে মধ্যে ইংরেজিতে। পরে মনে হয়েছে তারা সেসময় সংশয়ে পড়েছিলেন একারণে যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেনাবাহিনীর প্রধান দুষমন তখন কিন্তু ছাত্র সম্প্রদায়। সংশয়ের আরেক কারণ, আমি তো তাদের ঘোষণা শুনে অনুষ্ঠান করতে এসেছি। সেনাকর্মকর্তাদের একজন (এখন মনে হয় ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের কর্মকর্তা) ইংরেজিতে বললেন রিসিপসনে তোমার ঠিকানা লিখে রেখে যাও, কাল যথাসময়ে সেনাবাহিনীর লোক গাড়ি করে তোমাকে নিয়ে আসবে। আমি যথারীতি রিসিপসনে এসে এক ভুল ঠিকানা লিখে দিয়ে কোন রকমে মেসে ফিরে আসি।
রেডিওতে ভিন্ন ঠিকানা লিখে দিয়ে এলেও দ্রতই চলে যাই সতীর্থ বন্ধু হারুনদের (বর্তমানে আরডিএ’র চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ বজলুর রহমানের চাচাতো ভাই) মেহেরচ-ির বাড়িতে। দুপুরে হারুনের সঙ্গে যেতে হয়ে তার এবং আমারও পূর্বপরিচিত টিকাপাড়ায় দানেশ দারোগার বাসায়। দানেশ দারোগা ও তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাসায় থাকায় নিরাপদ মনে করছেন না। এজন্য তারা হারুনকে হাত জোড় করে অনুরোধ করলেন, তাদের ছেলে-মেয়েদের তানোরের হরিদেবপুরের বাসায় নিয়ে যেতে। দারোগা পরিবারের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলো না হারুন। দানেশ দারোগার স্ত্রীর বারবার অনুরোধ করায় আমাকেও তাদের সঙ্গে হরিদেবপুর যাবার প্রস্তুতি নিতে হলো। মেহেরচ-ী থেকে দুটি মোষের গাড়ি ভাড়া করা হলোÑ সঙ্গে দানেশ দারোগার চার মেয়ে ও এক ছেলে।
সন্ধ্যার একটু আগে আগে গাড়ি চলতে শুরু করলো। রাত ন’টা-সাড়ে ন’টা নাগাদ আমরা যখন কালিগঞ্জ পৌঁছাই তখন এক বৃদ্ধ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বললেন সামনের দিকে অগ্রসর না হতে। কিছুক্ষণ আগেই এ ধরনের একটি গাড়িতে ডাকাতি হতে তিনি দেখেছেন। ডাকাতরা লোকজনদের মারধর করে সব মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। গাড়ির এক দারোয়ান হারুনকে বললোÑ পাশের গ্রামেই তার মামাতো বোনের বিয়ে হয়েছেÑ তার বাড়ি গিয়েই রাতটা কোনভাবে কাটানো যাবে। অগত্যা তাই সিদ্ধান্ত হলো। গাড়ি রেখে গাড়োয়ানরা তাদের মোষ অন্যত্র বেঁধে দিলো। আমি আর হারুন দু’জন দুই গাড়িতে শুয়ে পড়লাম। বাড়ির লোকেরা মেয়েদের ভেতরে নিয়ে গেল।
রাত্রি আন্দাজ একটা-দেড়টা হবেÑ আমাদের দুজনকে ডেকে তোলা হলো খাবার জন্য। খাবারের আয়োজন সামান্যই, আলুর দম আর গরম ভাত। এখনো আমার মনে পড়ে আজ অবধি অত ভাত আমি কোনদিন খাইনি। পরদিন রওয়ানা হয়ে দুপুর নাগাদ হরিদেবপুর পৌঁছাই। দিন ছয়েক হরিদেবপুরে বেশ ভালই কাটছিলো। হঠাৎ মনে পড়লো বাড়ির কথাÑ বাবা মায়ের কথা। তারা তো আমার জন্য অবশ্যই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। হারুনকে বললাম তার মোটর বাইকে রাজশাহী অব্দি পৌছে দিতে। মনে আছে ৭ এপ্রিল ভোরে হারুন আমাকে ওর মোটর বাইকে নিয়ে রওয়ানা হলো, কিন্তু দুয়ারি পর্যন্ত আসার পর জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় হারুনের পক্ষে আর এগুনো সম্ভব হলো না। শেষে আমি হেঁটেই রওয়ানা হলাম। রাজশাহী শহরে ঢোকা নিরাপদ মনে না হওয়ায় শহরকে ডাইনে রেখে কখনো খেতের আইল পথ, কখনো চষা খেতের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
পুঠিয়া বাজার পেরিয়ে ঠিক ভর সন্ধ্যার সময় পৌঁছলাম ঝলমলিয়া। ঝলমলিয়া এখনকার মত তখন জমজমাট ছিলো না। রাতে এখানে কোথায় থাকা যাবে, গ্রামের এক বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করায় ইউনিয়ন পরিষদের এক প্রাক্তন মেম্বারের বাড়ি দেখিয়ে দিলেন। মেম্বার সাহেব সদালাপী মানুষ। ছাত্র পরিচয় পেয়ে খুব যেন আন্তরিক হয়ে উঠলেন। বাড়ির দহলিজ ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। মুরগির মাংস দিয়ে রাতে খাবারের ব্যবস্থা হলো। মেম্বার সাহেব রাজশাহী শহরে কি কি ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলেন। রাজশাহীতে না থাকায় খুব বেশি তথ্য তাকে দিতে পারলাম না। ভদ্রলোক এক পর্যায়ে স্মৃতিচারণ করে নিজেদের পূর্বপুরুষদের নানা কথা বললেন। ভয়ঙ্কর যে কথাটি বললেন, তা হলো বাড়ি দক্ষিণ পাশের জঙ্গলে একসময় বাঘের ভীষণ উপদ্রব ছিলো। সন্ধ্যার আগেই সবাই খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘর বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়তো।
খাওয়া শেষ করে রাতে ঘুমিয়েছি, দহলিজ ঘরে চৌকির উপর। মাঝরাতে মনে হলো পায়ের কাছে কি একটা শুয়ে আছে। পায়ে নরম নরম লাগায় আমার মনে বিশ্বাস জন্মালো আর কিছু নাÑ বাঘই পায়ের কাছে এসে বসে আছে। ভয়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয় হয় অবস্থা। প্রচ-রকমভাবে কাঁপতে শুরু করলাম। হঠাৎ ঘরের মধ্যে কে যেন কেশে উঠলো। আমি সম্বিৎ ফিরে খানিকটা সাহস করে তোতলাতে তোতলাতে বললাম ভাই, দেখুনতো আমার পায়ের কাছে বোধহয়, বাঘ বসে আছে? রাখাল লোকটি এসে দেখে পেট মোটা এক ছাগল আমার পায়ের কাছে শুয়ে আছে। ভয় ভাঙ্গলেও রাতে আর ঘুম হলো না।
পরদিন ভোরবেলা রওয়ানা হবো তৈরি হচ্ছি। গৃহকর্ত্রী কখন উঠে আমার জন্য রান্না করে রেখেছেন। ভদ্রনারী মায়ের মতো পাশ বসে খাওয়ালেনই শুধু নয়, শাড়ির টুকরোয় পোটলা করে কিছু শুকনো খেঁজুর গুড় আর মুড়ি বেধে দিলেনÑ যাতে ক্ষুধা লাগলে রাস্তায় খেতে পারি। ঝলমলিয়া থেকে সাতটার সময় রওয়ানা হলাম। গন্তব্য নাটোর, জোনাইল, চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, বনোয়ারিনগর ফরিদপুর হয়ে শাহজাদপুর। রাস্তায় গাছ ফেলে ফেলে ব্যারিকেড। এক ব্যারিকেড থেকে আরেক ব্যারিকেড অব্দি ঘোড়ার গাড়িতে গিয়ে নাটোরের আহম্মদপুর পৌঁছলাম। আহম্মদপুর ব্রিজের পূর্বদিকে সংযোগস্থলের হাত দশেক মাটি কেটে ফেলা হয়েছেÑ যাতে সড়ক পথে পাক-বাহিনীর সৈন্যরা রাজশাহীর দিকে যেতে না পারে। নড়বড়ে সাকোঁ। ভয়ে ভয়ে সাকোঁ পেরিয়ে ওপারে গিয়ে পৌঁছালাম। আহম্মদপুর বাজারে তখন এলাকার স্বেচ্ছাসেবকগণ ‘ত্রাণ শিবির’ খুলে মুড়ি-মুড়কি বিতরণ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জেনে তারা খুবই সমাদর করলেন আমাকে। স্বেচ্ছাসেবকদের একজন জোনাইল যাবার পথ আমাকে দেখিয়ে দিলেন। চলনবিলের মেঠোপথ বেয়ে চলেছি। ভীষণ রৌদ্র উঠেছে। চার কিমি মতো পথ যাবার পর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। এসে পৌঁছলাম মানগাছা গ্রামে। গ্রামের একেবারে শেষ মাথায় বাবলা গাছের ছায়ায় থপ করে বসে পড়লাম। খুবই ব্যথা দু’পায়ে। আমাকে বসতে দেখে যুবক বয়সের এক লোক এগিয়ে এলেনÑ ইসহাক আলি কৃষিকাজ করেন। সদ্য বিয়ে হয়েছে। বউ নিয়ে নতুন করে ঘর বেঁধেছেন গ্রামের এই ঢোকার মুখে। ভাবলাম এখানেই বসে ঝলমলিয়ার গৃহকর্ত্রীর দেয়া মুড়ি-গুড় দিয়ে খেয়ে নিই। আমি মুড়ি-গুড় খাওয়া শুরু করবো দেখে, ইসহাক আলি আমার সামনে থেকে মুড়ি-গুড়ের পোটলা সরিয়ে নিয়ে বললেন, মুড়ি-গুড় না আপনি ভাত খাবেন, ব্যবস্থা আছে। ইসহাক আলির কথা মত আমি কাছের খালের স্বচ্ছ ঠা-া পানিতে গোসল সেরে এলাম। একটি কথা এখানে উল্লেখ করি, খালে পানি বলতে হাঁটু পানি। কচুরিপানায় ভরা। তবে পানি ভীষণ ঠা-া। গোসল করে খুব যেন শান্তি পেলাম। গোসল সেরে ফিরতেই ইসহাক আলি হাত ধরে তার ঘরের ভেতর নিয়ে গেলেন আমাকে। ছোট্ট কুঁড়েঘর, মেঝেয় মাদুর বিছানো। একটি মাটির শানকিতে ভাত আর আলুভর্তা। পাশে রাখা বড় কাঁসার জামবাটি ভর্তি ছাগলের দুধ। আমি খেতে সংকোচ বোধ করলাম। কারণ ভাত-ব্যঞ্জন সবটাই তো আমাকে দেয়া হয়েছেÑ তারা কী খাবেন? আমি কথাটি ব্যাখ্যা করে বলতেই প্রতিবাদ করে ইসহাক আলি বললেন, ‘ভাই আপনারা ছাত্ররা তো আমাদের ভালোর জন্য তো আন্দোলন করছেন, দেশের সব মানুষের ভালাইয়ের জন্যে কাজ করছেন! আপনারাই তো আমাদের আট আনা সের চাল খাওয়াবেনÑ এজন্য একবেলা আমরা নাই বা খেলাম।’
ক্ষুধার্ত মানুষ আর কোন কথা বলিনি। মাথা নিচু করে খাবার শেষ করলাম। আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। পথে বারবার মনে হতে লাগলোÑ ইসহাক আলিদের স্বপ্ন পূরণ হবে তো? আমি কিন্তু আজও মানগাছার ইসহাক আলির প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি।
লেখক : গবেষক, অধ্যাপক, লিবারেল আর্টস, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর।
ও প্রাক্তন অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।