বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বর্তমান সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছেÑ নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর আগের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু সে উদ্যোগগুলো যথার্থ ছিল না। অর্থাৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওইসব তালিকা করতে গিয়ে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এ পর্যায়ের তালিকা প্রণয়নের বিষয়টিকে অন্য গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তি ধরেই দেশের অভিষ্যত বিনির্মাণের দিকেই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার। এর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটাও যথার্থ হওয়া চায়। ইতোমধ্যেই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করেছে। অবশ্যই এটির মধ্যে স্বচ্ছতা থাকাটা খবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ লক্ষে সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, আবেদনকৃত ও তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিরীক্ষণ এবং তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে উপজেলা, জেলা/মহানগর যাচাই-বাছাই কমিটি করেছে সরকার।
কিন্তু যাচাই-বাছাই নিয়ে ইতোমধ্যেই তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীতে এই পরিস্থিতি তুঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডারের নেতৃত্বে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসক বরাবর এক আবেদনে দাবি করেছেন, মহানগরীর চারথানার ৬৭ জন বিতর্কিতÑ অমুক্তিযোদ্ধা তাদের যাচাই-বাছাই হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন রোববার দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
ওই অভিযুক্ত ৬৭ জন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাকে তাদেরকেও যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আনতে হবে। যেহেতু তারা অভিযুক্ত তারা কোনোভাবেই যাচাই-বাছাই কমিটির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটি খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করছেন অভিযোগকারীরা।
অমুক্তিযোদ্ধা যারা ইতোমধ্যেই তালিকাভুক্ত হয়ে আছেন তারা এখন নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে করে তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ না পড়েন।
আমরা মনে করি সময়ের প্রয়োজনেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক একটি তালিকা প্রণয়ন করা যুক্তিযুক্ত এবং তা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক যে, কাজটি মোটেও সহজ নয়। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঐকমত্য না হলে উদ্দেশ্য সফল হওয়া সম্ভব হবে না। কেননা ইতোমধ্যেই প্রচুর অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে আছেন। তারা কোনোভাবেই তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হোক তা চাইবেন না। কিন্তু এটাও ঠিক যে, অমুক্তিযোদ্ধা হয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করাটাও অপরাধ। এমন অপরাধের জন্য কারো সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হলে সেটি তার একান্তই কর্মফল হবে।
আমরা প্রত্যাশা করতে চাই নির্মোহভাবেই যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণীত হোক। এই কাজটি করা সম্ভব হলে আগামী প্রজন্মের কাছে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে, নতুবা তারা আমাদের কৃত কর্মের জন্য ক্কিারই শুধু জানাবে।