সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
পাবনা প্রতিনিধি
১৯৭১ সালে ৭ নং সেক্টরের অধীনে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি আব্দুস সাত্তার মিয়ার। আব্দুস সাত্তার মিয়া পাবনার সুজানগর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মরহুম তাছেন মিয়ার ছেলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাতৃভূমিকে মুক্ত করবার জন্য দলপতির আদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। সংগ্রামে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ১৯৭২ সালে জাতীয় মিলিশিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাবনা সদরের শিবিরপ্রধান মাহবুবুর রশিদের স্বাক্ষর ও ‘জয়বাংলা’ সীলমোহর সংবলিত সনদ প্রদান করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে নানান জটিলতায় সেটি হালনাগাদ করতে তিনি ব্যর্থ হন। ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী তাঁর জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। না পাওয়ার বেদনা নিয়ে তিনি চলে গেলেও তাঁর সন্তানেরা এখন ধরণা দিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বীকৃতির আশায়।
আব্দুস সাত্তার মিয়ার পরিবার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আব্দুস সাত্তার সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। স্বাধীনতার পরে তিনি আর্থিক দৈন্যতার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। এ জন্য তার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র নেয়া সম্ভব হয়নি।
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালের দিকে পাবনার সুজানগরে ফিরে এলে তখন থেকেই মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র সংগ্রহ অভিযান চালান। তিনি জেলা ইউনিট কমান্ড, উপজেলা কমান্ডারদের কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রের জন্য বিভিন্ন সময়ে গেলেও তা পাননি। এ বেদনা নিয়ে তিনি ২০১০ সালে পরপারে চলে গেছেন। এরপর থেকে তার ছেলে আবুল কালাম আজাদ ও রিংকু অনিমিখ বাবার শেষ ইচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনে কয়েকদফা দরখাস্ত ও দেন-দরবার করেও কাজে আসেনি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দলিল উদ্দিন দুলাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না করে নিবন্ধিত হওয়া দুঃখজনক, কিন্তু এর থেকে হাজারগুণ বেশি দুঃখজনক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নিবন্ধিত না হওয়া, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া। আব্দুস সাত্তার মিয়া সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়ার সেজো ছেলে রিংকু অনিমিখ জানান, আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি। এমনকি তার সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও অনেক গল্প শুনেছি। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্য পাওয়া নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া। আমি তার সন্তান হিসেবে সরকারের কাছে দাবি করছি, আমার বাবা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হন। তবে তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সুজানগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মজিদ বলেন, সরকার বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকাভুক্ত করার জন্য অনলাইনে দরখাস্ত গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই যাচাই-বাছাই কমিটি তৈরি হবে। কমিটি এবং সাক্ষীদের মাধ্যমেই বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিসহ তালিকা সম্পন্ন করা হবে।
জাতীয় মিলিশিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাবনা সদরের তৎকালীন শিবির প্রধান মাহবুবুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ‘জয়বাংলা’ সীলমোহর সংবলিত যে সনদপত্র প্রদান করা হয়েছে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য এর চেয়ে আর কী প্রমাণ লাগবে?