মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হার খুবই আশংকাজনক। নিরাপদ সড়কের দাবিটিও তাই খুবই কাক্সিক্ষত এবং দেশের সচেতন মানুষের দাবিও। কিন্তু সড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনোভাবেই থামে না। একে অপরকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে চলছে সড়ক দুর্ঘটনার দাবিটি। কিন্তু এর কোনো উপায় সম্পর্কে মোটেও অগ্রগতি হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের ব্যর্থতা যেমন আছে, তেমনি আবার পথচারীর উদাসীনতাও দায়ী। আবার সড়কে যথেচ্ছভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছেইÑ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ অনায়াসেই এসব গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেই দিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, সড়কের পাশে হাটবাজারÑ দুর্ঘটনার জন্য নানা কারণ কারণ জড়িয়ে আছে। এই অব্যবস্থার জন্য কাউকেই জবাবদিহি করতে হয় না। এসব সমস্যার কথা আমরা সবাই বলছি বটে কিন্তু সমাধানের ব্যাপারে মোটেও এগাচ্ছি না।
পথচারীদের সড়ক সচেতনতা এবং হাল্কা যানবাহনের আরোহীরাও দুর্ঘটনার জন্য কম দায়ী নয়। পথচারী যেমন খেয়ালখুশি মত পথে চলতে ও পারাপারে অভ্যস্থ আবার যারা বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল, কিংবা নছিমন করিমন চালায় তারা সড়কের নিয়ম মানার ধারটি পর্যন্ত ধারে না। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একটা বড় অংশ থাকে মোটর সাইকেল চালক ও তার আরোহী। তরুণ যারা দুরন্ত গতিতে ডোন্ট কেয়ার গাড়ি চালায় আবার লক্ষ্য করা যায়, মোটর সাইকেলে করে স্ত্রী শিশু সন্তান নিয়ে ভ্রমণ করতে। উভয় ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা মোটেও কম নয়। খুব সম্প্রতি এ রকম দুটি মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নওগাঁর মান্দায় ট্রাক চাপায় মা অসীমা রানী (২৪) ও তার ৯ মাস বয়সি ছেলে বিজয় রায় নিহত হয়েছে। নিহত অসীমা রানী ও বিজয় রায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার নিরলী কোলাহাট এলাকার রামায়ণচন্দ্র রায়ের স্ত্রী ও ছেলে। ২৪ জুলাই দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত অসীমা রানী ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য মোটরসাইকেলযোগে মান্দা মমিন শাহানা কলেজ কেন্দ্রে আসছিলেন। মোটরসাইকেলে অসীমা রানী ছাতা ব্যবহার করেছিলেন বৃষ্টি থেকে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য। তারা সাতবাড়িয়া মোড়ের নিকট পৌঁছলে অসীমা রানীর হাত থেকে ছাতাটি উড়ে যায়। এতে বাচ্চাসহ তিনি পাকা রাস্তার ওপর পড়ে যান। এসময় রাজশাহী থেকে নওগাঁগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মা ও ছেলের মৃত্যু ঘটে। কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে কী মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল যা জীবিতদের আজীবন যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। এম দৃশ্য হনমামেশাই সড়কে লক্ষ্য করা যায় যে, মোটর সাইকেলে শিশু-সন্তানসহ একটি ছোট পরিবার সওয়ারি। মোটর সাইকেলের আকস্মিক ব্রেক থেকেও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারেÑএর নজিরও কম নয়।
রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিল্লার রহমান জানান, ডিসি অফিসে চেয়ারম্যানদের একটি কর্মশালায় যোগদানের জন্য ২২ জুলাই দুপুরে কালুরপাড়া নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার পথে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম গ্রহ (৫৫) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এমন অসংখ্য মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদেরকে পীড়িত করে চলেছে। মোটর সাইকেলে অরক্ষিতভাবে শিশুদের নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ বন্ধ হওয়া উচিৎ।
সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘নীরব সুনামি’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু পরিবার নয় দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলছে।
এসব দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই নিতে হবে। পরস্পর দোষারোপের মধ্য দিয়ে আমরা স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দিয়ে চলেছি। জবাবদিহিতা ও শাস্তির ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করা ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না। সেই সাথে জনসচেতনতার জন্য সরকারের সাথে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃত কর্মসূচি থাকা দরকার।