রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভাংচুর লুটপাটের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মিদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসকল মামলায় প্রধান আসামীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি মোহা. আসাদুজ্জামান এবং আয়েন উদ্দিনসহ কেশরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রুখতে মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন কেশরহাট পৌরসভার মেয়রসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী। আর মোহনপুর সরকারি কলেজ গেটের সামনে মহাসড়কের উপর সরকার পতনের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল করছিল কয়েক শতাধিক ছাত্র-জনতা। এসময় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পুলিশসহ মিছিল নিয়ে কলেজ গেটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ছাত্রজনতার ধাওয়াই পুলিশসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। এরপর মিছিলকারিরা আওয়ামী লীগ পার্টি অফিস, থানার পুরাতন ভবনে এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংসযোগ করে।
তবে এসময় ছাত্রজনতার মিছিল মিছিলে যোগ দেয় বহিরাগতরাও। দুপুর ২টার দিকে কেশরহাট পৌর ভবনে অগ্নি সংযোগ করা হয়।
৫ আগস্ট এসকল ঘটনার প্রতিবাদে কেশরহাটে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন আওয়ামী লীগ। এ মিছিলে যোগ দেন রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন, কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান। এদিন সকালে মিছিলকারিরা কেশরহাট পৌর জামাতের এক নেতার দোকান ভাংচুর চালানো হয়।
এরপর সাবেক দুই এমপি পথসভায় বক্তব্য শেষে আগুনে পোড়ানো ক্ষতিগ্রস্ত কেশরহাট পৌরভবন পরিদর্শন করেন।পৌর ভবন পরিদর্শন শেষে তার মহাসড়কে উঠতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর পৌঁছে যায়। এখন থেকে সাবেক দুই এমপিসহ পৌর মেয়র নিরাপদের সন্ধানে দ্রূত পাড়ি জমান। এরপর মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট। দুই তিন ধরে চলে এ ধরনের তাণ্ডব লীলা। চরম নিরাপত্তাহীন পড়েন সাধারণ আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও।
সপ্তা খানেক পর থানায় পুলিশি কার্যক্রম চালু হয়। এরপর দোকান ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে মোহনপুর থানায় ৩টি মামলা দায়ের হয়।এর মধ্যে মোহনপুরে ঘটনায় দুটি এবং কেশরহাটের ঘটনায় ১টি মামলা দায়ের হয়।
এসকল মামলার প্রত্যেকটিতেই আসামীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন এবং কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামানের নাম।
কেশরহাট ঘটনায় মামলাটি দায়ের করেন নোমান মোদিও ষ্টোরের মালিক জামাত নেতা শরিফুর ইলাম। তার দায়েরকৃত মামলায় ৩৮ জন আসামীর নাম উল্লেখসহ ১২০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। মোহনপুর উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মাসুম ফটোস্ট্যাটের মালিক নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে দোকান ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় ৩৮ জনের নাম উল্লেসহ ১০০ থেকে ১১০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন। তুষার কসমেটিক্সের পক্ষ থেকে অপর মামলাটি দায়ের করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ মামলার নাম উল্লেখিত আসামী ৬৩জন। এছাড়াও রয়েছে ৩০০জন থেকে ৪০০জন অজ্ঞাত আসামী।
স্থানীয়রা জানায়, সরকার পতনের দিন ছাত্রদের ভাংচুর করতে দেখা যায়নি। তবে রাজনৈতিক একটি পক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে বাড়ীঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং দখলবাজি চালানো হয়।
সরকার পতনের পর কেশরহাট অগ্নি সংযোগ করা হয় পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামানের বাড়িতে। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সাবেক পৌর কাউন্সিলর রুস্তম আলীর বাড়িতে, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ন শাহিনুর রহমানের বাড়িতে, রায়ঘাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু হোসেনের বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। উপজেলা জুড়ে আওয়ামীগ নেতাদের মালিকানাধিন এবং লীজকৃত শতাধিক পুকুরের চাষকৃত মাছ হরিলুট করা হয়। কেশরহাট রহমান হোন্ডা, দোয়েল ডিজিটাল সাইনসহ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাংচুর চালিয়ে লুটপাটের কথা স্থানীয় একাধিক সূত্র জানান।