সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
কেশরহাট (মোহনপুর) প্রতিনিধি
রাজশাহীর মোহনপুরে চলছে পরিক্ষামূলক ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের কাজ। উৎকোচ দিলেই এক মালিকের জমি অন্য কাউকে মালিক বানানোর অভিযোগ উঠেছে একশ্রেণির স্যাটেলমেন্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ধরনের নানা অভিযোগ তুলে গতকাল সোমবার কেশরহাট পৌরসভায় অবস্থিত স্যাটেলমেন্ট অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে দর্শনপাড়া সিহালইসহ একাধিক গ্রামের জনসাধারণ।
সরোজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৪ সালে উদ্বোধন শেষে ২০১৫ সাল থেকে মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় মাঠ পর্যায়ে পরিক্ষামূলকভাবে ভূমির নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ভূমির খাজনা-খারিজ আধুনিকায়নের লক্ষ্য নিয়ে সরকারের ডিজিটাল নকশা তৈরির কাজে জনসাধারণ ঊৎসাহের সঙ্গে জরিপ কাজে সহয়তা শুরু করে। এ সুযোগে কর্মকর্তারা দায়িত্বের অপব্যবহার করে কতিপয় লোকদের কাছে গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বৈধ মালিকদের জমি তাদের নামে রেকর্ড তালিকাভুক্তি অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ইতোমধ্যে একাধিক স্থানে জরিপ কাজ বন্ধ করে দেয়া হলেও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে কাজ চলতে থাকে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সহয়তা চেয়ে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি চলছে খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তিখাস খতিয়ানভুক্তকরণ, পূর্বে রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলি সম্পত্তি পরবর্তী রেজিস্ট্রিকৃত মালিকের নামে রেকর্ডভুক্তিকরণ। বদর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি জরিপকারীরা টাকা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করে। ফলে গ্রামের অনেক সহজ-সরল প্রান্তিক জমির মালিকরা নিস্ব হচ্ছেন। এ ধরনের জরিপ কাজে টাকা লেদেনের খবর ছড়িয়ে পড়লে ডিজিটাল জরিপ প্রত্যাখান করছে অনেক মৌজার জমির মালিকরা। স্যাটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের এ ধরনের কর্মকা-ে অতিষ্ট হয়ে গতকাল সোমবার তাদের অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে দর্শনপাড়া গ্রামের এক ভূমির মালিক হাজি নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি রেকর্ড অনেকাংশে মানুষের হয়রানি লাঘব হবে আশা করে আমরা সবাই সহায়তা দেয়ার পরও রেকর্ড কর্মকর্তারা সচ্ছতা দেখায় নি। আমার খতিয়ানভুক্ত বেশ কয়েকটি দাগ খাস খতিয়ান তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ওই গ্রামের মাজেদুর রহমান বলেন, রেকর্ড কর্মকর্তাদের চাহিদার টাকা দিতে না চাইলে আমার আংশিক খতিয়ান খুলে দেয় নি। ঘুষ ছাড়া কোনো জমির আসল মালিক জমি পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী স্যাটেলমেন্ট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ভূমি জরিপ কাজ অত্যন্ত সচ্ছভাবে হচ্ছে দাবি করে বলেন, জনসাধারণের সুবিধার্থে কেশরহাট পৌরসভায় অস্থায়ী কার্যালয় দেয়া হয়েছে। এখানে ঘুষ লেনদেন সম্পর্কে আমার কাছে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অথবা মৌখিক অভিযোগ দেয় নি। অনেক লোক না বুঝে জটলা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে পৌর মেয়রের সহযোগিতা পাচ্ছি। গতকালের সৃষ্ট বিষয়ে মেয়রকে নিয়ে আজ মঙ্গলবার আলোচনা করা হবে। এছাড়াও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, ভূমি রেকর্ড কাজ শুরুতেই জনসাধারণ রেকর্ড প্রত্যাখান করে। সরকারকে সহয়তা করতে আমি নিজে জনসাধারণদের উদ্বুদ্ধ করি। বর্তমানে রেকর্ড কাজে অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলে জনসাধারণ গতকাল স্যাটেলমেন্ট অফিসে তালা ঝুলিয়েছে। সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে আমি আবারো জনসাধারণ ও স্যাটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করা হবে।