রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
মৌলভীবাজারের বড়হাটে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশের অভিযান ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শেষ হয়েছে।
প্রায় ৮০ ঘণ্টার অভিযান শেষে শনিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে এসে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, আস্তানাটিতে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছেন।
জেলা পুলিশের সহায়তায় সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বড়হাটের এই বাড়িটির পাশাপাশি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে নাসিরপুরে আরেকটি বাড়িতে অভিযান শুরু করেছিল গত বুধবার ভোরে।
নাসিরপুরের ওই বাড়িতে বৃহস্পতিবার অভিযান শেষে ছিন্নভিন্ন সাতজনের লাশ পাওয়া যায়। ঘেরাওয়ের মুখে পালাতে না পেরে জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের উড়িয়ে দেয় বলে পুলিশের ভাষ্য।
নাসিরপুরে অভিযান শেষে শুক্রবার সকালে বড়হাটের আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলির ওই ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে চূড়ান্ত অভিযান ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শুরু হয়। এই দুটি বাড়ির মালিকই যুক্তরাজ্য প্রবাসী একটি পরিবার।
সিলেট-মৌলভীবাজার সড়কের আধা কিলোমিটারের মধ্যে এই বাড়িতে অভিযান শুরুর পর থেকে গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ আসতে থাকে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সন্ধ্যায় অভিযানে বিরতি দেয়া হয়।
শনিবার সকালে ফের অভিযান শুরুর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে সাংবাদিকদের সামনে এসে মনিরুল ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’র আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করে বলেন, “আমরা ভবনে প্রবেশ করেছি। দুজন পুরুষ এবং একজন নারীর লাশ পাওয়া গেছে।”
নিহত তিনজনের নাম-পরিচয় পাওয়া না গেলেও তাদের মধ্যে পুরুষ ব্যক্তিটি সিলেটে বোমা হামলার ঘটনায় ‘সরাসরি জড়িত’ ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
মৌলভীবাজারে এই অভিযান শুরুর আগেই সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় একটি জঙ্গি আস্তানায় সেনা অভিযান চলার মধ্যে পাশের এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধানসহ সাতজন নিহত হন।
মনিরুল বলেন, “নিহত একজন আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, সে সিলেটের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। তাদের (র্যাব-পুলিশসহ সাতজন) হত্যাকাণ্ডের জন্য এরা দায়ী।
“আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, তাদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো, কিন্ত তা আমরা পারিনি।”
জঙ্গিদের জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা সফল না হওয়ার জন্য তাদের আত্মঘাতী প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করেন মনিরুল।
তিনি বলেন, “জীবিত ধরার ইচ্ছা ছিল, তাদের স্যারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল। তারা সারেন্ডার না করায়.. কাল আপনারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলেন।”
অভিযান শুরুর পর শুক্রবার সকালে বেশ কিছুক্ষণ গুলি চলে। বাড়িটি থেকে ধোঁয়া উড়তেও দেখা গিয়েছিল। দুপুরে তিন দফা বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়।
সিলেটের ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালানোর কারণে সময় লেগেছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “তারা বিভিন্ন জায়গায় এক্সপ্লোভিস সেট করে রেখেছিল। প্রথম দিন পরশু এক মহিলা দুটি গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল। একটি ধানক্ষেতে পড়েছিল। সোয়াট সদস্যরা সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিল।”
অভিযান পরিচালনাকারীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাসহ সবার নিরাপত্তার খাতিয়ে সতর্কতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান মনিরুল। কষ্ট স্বীকারের জন্য স্থানীয়দের ধন্যবাদও জানান তিনি।
১৪৪ ধারা জারি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চালানো অভিযানের কারণে টানা চার দিন ধরে বিভিন্ন ভবনে যারা আটকা পড়েন, পৌরমেয়র ফয়জুর রহমান সকাল থেকে তাদের খোঁজখবরও নিচ্ছিলেন।
ফয়জুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ কোনো সমস্যার কথা বলেনি। তারা বলেছে, কোনো সমস্যা নেই। এখন পর্যন্ত তারা ভালো আছেন। তারা বলেছেন, তাদের আরও কষ্ট হলেও দেশ জঙ্গিমুক্ত হোক।”
শনিবার সকালে এই অভিযান শুরুর আগে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালালও সাংবাদিকসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংবাদিকসহ সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানেও টহলের পাশাপাশি তল্লাশি চালাতে দেখা যায় পুলিশকে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র নিতে পুলিশি সহযোগিতায় বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায়।– বিডিনিউজ