শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
প্রথমবারের মতো নওগাঁয় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন কৃষকরা। বর্তমানে মৌ বাক্সের মাধ্যমে মৌয়ালদের পাশাপাশি কৃষকরাও মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সরিষা মাঠ থেকে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি এবং আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান করতে কৃষি বিভাগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরিষা চাষের সাথে মধু আহরণ করে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন জেলার অনেক কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে নওগাঁর সরিষার মাঠ থেকে মৌয়ালদের পাশাপাশি কৃষকদের মাধ্যমেও মধু সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারের এ দপ্তরটি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাইলট কর্মসূচির অধীন জেলার রাণীনগর, আত্রাই, বদলগাছী ও মান্দা উপজেলার আগ্রহী কৃষকদের মধু সংগ্রহ করার জন্য আগ্রহী কৃষকদের মৌ বাক্স ও সার্বিক কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রত্যক কৃষককে প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে ৫টি করে মৌ বাক্স দেয়া হয়েছে। অনেক কৃষক আবার নিজের অর্থায়নে মৌ বাক্স কিনে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। এর ফলে একজন কৃষক দু’দিক থেকে লাভবান হচ্ছেন। প্রতিটি মৌ বাক্স থেকে সপ্তাহে একবার মধু সংগ্রহ করা যায়। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে সরিষা ফুলের খাটি মধু নিতে ভীড় জমাচ্ছেন। নিজের জমি ও আশেপাশের জমিতে চাষ করা সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার কার্যক্রম দেখে অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের কৃষক ও মধু সংগ্রাহক জহুরুল ইসলাম বলেন, আগে জানতাম না যে মধু সংগ্রহ লাভজনক একটি মৌসুমি ব্যবসা। কৃষি বিভাগের উৎসাহে আমি মধু সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে লাভবান হয়েছি। নিজের সরিষা খেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারছি। অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছে খাঁটি মধু পৌঁছে দিতে পেরে আমি অনেক খুশি। বর্তমানে জমিতে প্রতি কেজি মধু ৪শো টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। প্রতিদিন অনেককেই বিনামূল্যে মধু খাওয়াতে পেরে আমি ধন্য।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা হক বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামের সরিষার মাঠে ৮০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম ও আজিজুল ইসলাম। এছাড়া বড়গাছা ইউনিয়নে দু’জন কৃষক ২০টি ও মিরাট ইউনিয়নে একজন মৌয়াল ৬০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। যদি সার্বিক পরামর্শ নিয়ে সরিষা খেতের পাশে মৌ বাক্স ফেলে মধু সংগ্রহ করা যায় তাহলে খুব সহজেই একদিকে যেমন মধু পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে সরিষার ফলনও অনেক বেশি পাওয়া সম্ভব। এই ধারণাকে কৃষকদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল কার্যক্রম আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলার সরিষা খেতে ৮ হাজার ৯৫৩টি মৌ বাক্স স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩ কেজি মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার অবশ্যই লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হবে। সরকারের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে খুবই ভালো। একটি সরিষার খেতে যত বেশি মৌমাছি থাকবে সেই জমির সরিষার ফুলে তত বেশি পরাগায়ন হবে। ফলে ওই জমি থেকে সরিষার ফলনও অনেক বেশি পাওয়া সম্ভব।