বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
যক্ষ্মা এক সময় দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল। বলা হতো- যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা। তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। এখন চিকিৎসা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। জটিল অনেক রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে। যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা আছে। এটা ব্যয়বহুলও নয়। তারপরেও যক্ষ্মায় এত মানুষ মারা যাচ্ছেন কেন সেটা একটা প্রশ্ন। যক্ষ্মা রোগ নিরাময়যোগ্য হওয়ার পরও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, যক্ষা রোগী শনাক্ত করা সহজ কাজ নয়। দেশ থেকে যক্ষ্মা রোগ সফলভাবে নির্মূল করতে হলে রোগী শনাক্তের হার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। রোগ শনাক্ত করতে পারলে ও যথাযথ চিকিৎসা দেয়া গেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। দেশে যক্ষ্মা চিকিৎসায় ৯৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। এই রোগ শতভাগ নির্মূল করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা চাই যে যক্ষ্মা রোগটি দেশ থেকে চিরতরে নির্মূল হোক। আর এর জন্য যথাসময়ে রোগ নির্ণয় করতে হবে। যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার তার জন্য সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য দপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যবস্থা নেবে- এটা আমাদের আশা।
বিশ্বে প্রতিদিন যক্ষ্মায় মারা যান ৪ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ। বিশ্বে যক্ষ্মায় আক্রান্ত মোট রোগীর দুই-তৃতীয়াংশ যে আটটি দেশে আছে, তারই একটি বাংলাদেশ। আবার যক্ষ্মা যে শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হয়, তা-ও কিন্তু নয়, সবার মধ্যেই আছে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। বিশেষত শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ে। রোগ কিংবা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসেও আক্রমণ করতে পারে যক্ষ্মার জীবাণু। ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ, অপুষ্টি, মদ্যপান, মাদক সেবন, ধূমপান—এসব যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি, কেমোথেরাপি কিংবা দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছেন—এমন ব্যক্তি ও এইচআইভি আক্রান্ত মানুষেরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। ঝুঁকির তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে করোনা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অনেকেরই যক্ষ্মার ঝুঁকি বেড়েছে।
যক্ষ্মা রোগ নির্মূল কর্মসূচিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই রোগী যাতে ধৈর্যহারা না হয়ে পড়েন সেদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া যক্ষ্মা রোগীরা তাদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন নন। তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে রোগ শনাক্ত এবং চিকিৎসাসেবায় কিছু পার্থক্য দেখা যায়। তাই নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে পারলে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব হবে।