যমুনা রেলসেতুতে সিল্কসিটি দিয়ে শুরু বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ৮:৫১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের মাধ্যমে যমুনা রেলসেতুর এক লেন দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১১টায় ট্রেনটি নবনির্মিত রেলসেতুটি পার হয়। এর আগে ৫ জানুয়ারি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো শুরু করা হয়। পরে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

জানা গেছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রথমবারের মতো যমুনা রেলসেতুতে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলো।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টায় সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি পৌঁছায়। এরপর ১১টা ১৮ মিনিটে যমুনা রেলওয়ে সেতু পার হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় ইব্রাহিমাবাদ স্টেশনে ১১টা ৩৫ মিনিটে পৌঁছায়। পরে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।’

যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সেতুর দুটি লাইনের মধ্যে একটি লাইনে আজ (বুধবার) বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালু হলো। পর্যায়ক্রমে শিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো চলবে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আর ট্রেন চলবে না।

তিনি আরও জানান, রেলসেতুতে দুটি লাইন থাকলেও আজ একটি লাইন দিয়েই উভয় দিকে ট্রেন চলাচল করবে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে যেতে ডানপাশের লাইন অর্থাৎ সেতুর উত্তরপাশের লাইন দিয়ে ট্রেন চলবে।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে।

এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করে সরকার। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেলসেতুরটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।

প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। দেশের বৃহত্তর এ রেলসেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এ রেলসেতু ব্যবহারের জন্য ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের শুরুতে এই সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পাল্টে যমুনা রেলসেতু রাখা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ