বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
যশোর জেলা প্রশাসন এক কোটি খেজুরের বীজ বপন এবং ১৫ হাজার চারা রোপন করবে। ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস ও গুড় শিল্পের টেকসই সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জেলা জুড়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে ওই পরিমাণ খেজুর গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার খেজুর গাছের চারাও রোপন করা হবে। শনিবার (৬ জুলাই) থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তথ্যমতে যশোরের ৮টি উপজেলার মধ্যে অভয়নগর উপজেলায় ৩০ লাখ এবং বাকি ৭টি উপজেলার প্রতিটিতে ১০ লাখ করে মোট এক কোটি খেজুর বীজ বপন করা হবে।
দেশের বাজারে চিনির বিকল্প পণ্য হিসেবে গুড়ের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে শীতকালে খেজুরের রসের মতো গুড়েরও চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পায়। একসময় খেজুরের রস ও গুড়ের বাজার ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। এখন সর্বত্রই গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকী বিদেশে পর্যন্ত গুড় রফতানি হতে শুরু করেছে। ফলে খেজুরের গুড়ের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কছরের মাত্র চার মাসে সারাদেশে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলাই যায়, যত খেজুর গাছ, তার অর্ধেকও ব্যবহার হয় না। রাজশাহীতে খেজুর গুড়ের উল্লেখযোগ্য উৎপাদন হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় ৫৪৪ দশমিক ৩৭ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩টি। এর মধ্যে নতুন গাছ রয়েছে ৫ হাজার ৬২৫টি এবং পুরনো গাছ ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি। জেলায় মোট খেজুর চাষী রয়েছেন ৪৯ হাজার ৭১১ জন। খেজুরের গুড় ব্যবসায়ী রয়েছেন ৬৪৪ জন। এছাড়া এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন অন্তত ২১ হাজার ৮৫৬ জন। মৌসুমে একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ থেকে ২৩ দশমিক ৫২৩ কেজি রস আসে।
খেজুরের গাছ অনাদরে-অবহেলায় বেড়ে ওঠে। এখনো পরিকল্পিত উপায়ে খেজুর গাছ রোপন চাষযোগ্য হয়ে উঠেনি। কিন্তু খেজুরের গুড়ের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাতে খেজুর গাছের পরিকল্পিত চাষ শুরু করা যেতে পারে।
যশোরের জেলা প্রশাসন সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। খেজুর গাছ ও খেজুর গুড়ে উৎপাদন বাড়াতে এক কোটি বীজ বপনের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই কর্মযজ্ঞ প্রশংসার দাবি রাখে। দেশের সর্বত্রই এমন উদ্যোগ প্রত্যাশা করা যায়। দেশের প্রায় সর্বত্র খেজুর গাছ জন্মে থাকে। রাজশাহী এর অন্যথা নয়। এ মৌসুমে রাজশাহীতে অন্তত দেড়শো কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীতে খেজুরের বীজ বপন ও খেজুর চারা রোপনের উদ্যোগ নিতে পারে। এই বর্ষা মৌসুম থেকেই সীমিত আকারে এমন কার্যক্রমের সূচনা করা যেতে পারে।