যাচাইয়ে বাদ পড়ছেন অমুক্তিযোদ্ধারা || তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি?

আপডেট: মার্চ ২, ২০১৭, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। যাচাই-বাছাইয়ের সঠিকতা নিরূপণের কাজটি যে মোটেই সহজ নয়Ñ তা ইতোমধ্যেই উপলুব্ধ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে- একই সাথে আদালত কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে অনেক স্থানের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ স্থগিত আছে। তদুপরি কাজ হচ্ছে এবং দেশের অনেক জেলা ও উপজেলার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনেক স্থানের যাচাই-বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা করেছেন সেখানে গেজেটভুক্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়েছেন। অর্থাৎ বাদপড়ারা তাদের মুক্তিযোদ্ধার সমর্থনে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও যাচাই-বাছাই কমিটির তালিকা চূড়ান্ত করার আগে সম্পূর্ণ তালিকা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। সরকার শেষবার প্রকাশিত তালিকার ব্যাপারে জনমত ও প্রমাণ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা অনেক বেশি রাষ্ট্রীয় সম্মান ভোগ করছেন। কেবল মুক্তিযোদ্ধা স্বয়ং নয়- তাঁর ছেলে- মেয়ে ও নাতি নাতনীরাও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা লাভ করছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। অমুক্তিযোদ্ধা যারা ইতোমধ্যেই গেজেটভুক্ত হয়ে আছেন তারা ইতোমধ্যেই টিকে থাকার জন্য যাচাই-বাছাই কমিটিকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আবার যারা প্রকৃতঅর্থেই মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু কখনই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি তারাও সন্তানদের ভবিষ্যত মাথায় রেখে তাঁরাও তালিকাভুক্ত হতে চেষ্টা করছেন।
দৈনিক সোনার দেশের বুধবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় গেজেটভুক্ত ১৩০ জনের মধ্যে ১শ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বৈধ করা হয় এবং বাকি ৩০ জনকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গেজেটভুক্ত ১৩০ জন, অনলাইনে আবেদনকৃত ২৪৯ জন ও সরাসরি আবেদনকৃত ২৯ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি। এরপর গেজেটভুক্তদের ৩০ জনকে বাতিল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অনলাইন ও সাধারণভাবে আবেদনকৃত ২৭৮ জনের মধ্যে ২৬ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
যাচাই-বাছাই এর পর সর্বশেষ তালিকাভুক্তিতে যে সব গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়বেন তাদের ব্যাপারে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কি? যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে এতোদিন রাষ্ট্রীয় সম্মান ভোগ করেছেন, সরকারি ভাতা নিয়েছেন তারা কি দায়মুক্তি পেয়ে যাবেন? বলা যায়, তারা মিথ্যে তথ্য দিয়ে কিংবা প্রভাবিত করে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ গ্রহণ করেছেন এবং গেজেটভুক্ত হয়েছেন। সাধারণভাবেই এটি জালিয়াতি কাজ। এসব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। কোনো কিছু না হলেও তারা যে সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেছেন তা প্রত্যাহার করা বাঞ্ছনীয় হবে। একেবারে দায়মুক্তি দেয়া যথার্থ সিদ্ধান্ত হবে না বলেই আমরা মনে করি। নতুবা এরা নানা কৌশলে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাহির করতে পারেন।