বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
জঙ্গিরা থেমে নেই। নানাভাবে নানা উপায়ে তারা তারা সংঘটিত হতে চাচ্ছে। ধর্মকে তারা সব সময় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। আগেও করেছে, এখনো করছে। ধরণটা একেক সময় একক রকম। প্রয়োজনে নারী শিশু, এমনকি খুনি-দুনীর্তিবাজদেরও ব্যবহার করে থাকে। অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও তাদের কোনো বাছবিচার নেইÑ চোরাচালান থেকে শুরু করে মাদকের ব্যবসা- সব থেকেই অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। আর এসব অর্থ ব্যবহার হয় জঙ্গি-সন্ত্রাসী কাজে। বিশ্বব্যাপি জঙ্গিবাদের যে চরিত্র তা প্রায় একই রকম। এরা সুযোগ পেলেই মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে দেয়। উদাহরণ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশ। বাংলাদেশকেও তারা তালেবানি রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই তারা এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘ্ষোণা করেছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি জঙ্গিদেরকে দুর্বল করেছে। কুখ্যাত সব যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী খুনিদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করেছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিচার ও অভিযান প্রক্রিয়া এখনো বহাল আছে।
জঙ্গি সন্ত্রাসীরা দুর্বল হয়েছে কিন্তু তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাও করছে। আবারো আঘাত হানার সুযোগ খুঁজছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি সফল অভিযান জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার, সন্ত্রাস করার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ২৮ নারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করা হয়, তার মধ্যে আলী আহসান মো. মুজাহিদের ভাইয়ের স্ত্রীও রয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মুজাহিদের মৃত্যুদ-ের রায় গত বছর কার্যকর হয়। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন তিনি। একাত্তরের বদর নেতা মুজাহিদ ছিলেন বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রীও।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একটি বাড়ি থেকে সাকিয়াসহ ২৮ নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
নতুন করে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা এখন নারীদের মাঠে নামিয়েছে- এই ঘটনায় তা খুব করে প্রকাশ পেয়েছে। এর আগেও তারা নারীদের ব্যবহার করেছে। তবে এখন আরো সংগঠিত উপায়ে তাদের মাঠে নামিয়ে তথ্যের আদান প্রধান ও নারীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ধর্ম এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় য ধর্মপ্রাণ মানুষকে খুব দ্রুত প্রভাবিত করে। জঙ্গি মৌলবাদী গোষ্ঠি এটিকেই তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গ্রামে তো বটেই শহরেও নারীদের জামাতের নামে জঙ্গি দীক্ষা ও সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মের ব্যাপার বিধায় আশপাশের লোক সন্দেহ করে না। কিন্তু বিষয়টি শুধু ধর্মের ব্যাপার নয়Ñ ধর্মের আড়ালে সমাজের অশুভ শক্তি নিজেদের ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটা শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নয়Ñ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থেকে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্মকে ব্যবহার করে অধর্মের শক্তি যাতে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে।