যুদ্ধ শেষ করতে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল: ট্রাম্প

আপডেট: জুন ২৪, ২০২৫, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
তার সোমবারের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দুই শত্রু দেশের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধ সম্ভবত শেষ হতে যাচ্ছে। এমনটি হলে ওই অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আপাতত দূর হবে।

কিন্তু ট্রাম্প ওই ঘোষণা দিলেও ইসরায়েল বিষয়টি নিশ্চিত করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবারের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে তারা।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, “ওই হুমকি প্রতিরোধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলো কাজ করছে।”
তবে ইরানি এক কর্মকর্তা তেহরান অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে এর আগে নিশ্চিত করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েল হামলা না থামালে শত্রুতা বন্ধ হবে না।

ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “যেমনটি হওয়া উচিত সবকিছু তেমনটিই হচ্ছে বলে ধরে নিচ্ছি, যা হবে, যা বলা যায়, ’১২ দিনের যুদ্ধ’ বন্ধ করার জন্য মনোবল, সাহস ও বুদ্ধিমত্তা থাকার জন্য, ইসরায়েল ও ইরান, উভয় দেশকে আমি অভিনন্দন জানাতে চাই।”

ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দিয়ে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানে। তেহরান একটি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি মঙ্গলবারের প্রথমদিকে সামাজিক মাধ্যম এক্স এ বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোররাত ৪টা থেকে ইসরায়েল যদি ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের ‘বেআইনি আগ্রাসন’ বন্ধ করে, তাহলে এরপর ইরানেরও প্রতিক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার কোনো উদ্দেশ্য নেই।

আরাগচির উল্লেখিত সময়ের পর থেকে ইরানে ইসরায়েলি হামলার আর কোনো খবর হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
“আমাদের সামরিক অভিযান অবসানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে,” বলেছেন তিনি।

হোয়াইট হাউজের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে অস্ত্রবিরতির বিষয়টি চূড়ান্ত করেন আর ইরান আর হামলা না চালানো পর্যন্ত ইসরায়েল এতে সম্মত আছে বলে জানিয়েছে।
ট্রাম্প এমন ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে ইসরায়েল ও ইরান যে কোনো চলমান অভিযান সম্পন্ন করার জন্য কিছুটা সময় নেবে, তারপর থেকে পর্যায় ভিত্তিক প্রক্রিয়ায় অস্ত্রবিরতি শুরু হবে।

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী থাকার কথা অস্বীকার করেছে কিন্তু দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “ইরান যদি চায় তাহলে বিশ্ব নেতারা আমাদের থামাতে পারবেন না।”

আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ যাদের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। ইসরায়েল এ বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার, কোনোটাই করেনি।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ফোন কলে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে তেহরানের সম্মতি নিশ্চিত করেছেন বলে এই আলাপের বিষয়ে জ্ঞাত এক মার্কিন কর্মকর্তা মঙ্গলবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইরানিদের সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন বলে হোয়াইট হাউজের ওই কর্মকর্তা জানান।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন বা ওয়াশিংটনের ইসরায়েলি দূতাবাস এ বিষয়ে রয়টার্সের জানানো মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েল শিগগিরই ইরানে তাদের অভিযান শেষ করতে চাইছিল আর এই বার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠায়।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু তার সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আর তা সোমবার মধ্যরাত পার হয়ে মঙ্গলবারের প্রথমদিকে শেষ হয়। নেতানিয়াহু মন্ত্রীদের বৈঠকের বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বলার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু ওই অঞ্চল শান্ত হয়ে উঠেছে এখনও এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার রাতে ও এর দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মঙ্গলবার প্রথমদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের জন্য দুটি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সতর্কতা জারি করেছিল।
মঙ্গলবারের শুরুর দিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও জানায়, শত্রুর আকাশযান প্রবেশ করতে পারে এমন আশঙ্কায় গোলান মালভূমির দক্ষিণাঞ্চলে সতর্কতা সঙ্কেত বাজানো হয়।

এর আগে সোমাবার ট্রাম্প কাতারে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের হামলার বিষয়টি উড়িয়ে দেন এবং এই হামলার বিষয়ে আগাম নোটিশ দেওয়ার জন্য তেহরানকে ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি জানান, তিনি ইসরায়েলকে শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করবেন।
তিনি জানান, ইরান ওই মার্কিন বিমান ঘাঁটির দিকে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। ইরানের এই হামলাকে ‘অত্যন্ত দুর্বল প্রতিক্রিয়া’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “আমরা এটি প্রত্যাশা করছিলাম আর তা খুব কার্যকরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে।”

এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে ইরান একইরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সীমিত পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে মান ধরে রেখেছিল তেহরান কিন্তু উস্কানি দিয়ে লড়াই বিস্তৃত করেনি যা তারা মোকাবেলা করতে পারবে না।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে সীমিত হামলার চালানোর মধ্যেমে এবারও তেহরানের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।- বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ