মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
হৃদরোগে এক যুবদল নেতার মৃত্যু ঘটনায় হত্যা মামলা করে সংগঠনের আরেক নেতার ‘টাকা কামানোর’ অভিযোগ পেয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মারা যাওয়া নেতার বাবা।
বগুড়ার পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেওয়া এই আবেদনে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত ও কবর থেকে ছেলের লাশ না তোলার অনুরোধ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ ও বিজিবির ধাওয়ার মধ্যে সড়কে মারা যান বগুড়ার শাজাহানপুরে যুবদল নেতা ফোরকান আলী।
এই মৃত্যুর কারণ ‘হৃদরোগে’ জানিয়ে সে সময় ময়নাতদন্ত ছাড়াই সমাহিত করা হয় ফোরকানকে।
তবে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস আলী হলুদ যে মামলা করেন, তাতে ‘গুলি করে’ হত্যার অভিযোগ এনেছেন।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় চার নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
ফোরকানের বাবা আবদুল কুদ্দুস অভিযোগ করেছেন, তার অনুমতি ছাড়াই আদালতে করা মামলার বাদী ও সাক্ষীরা জনগণের কাছে চাঁদা দাবি ও টাকা আদায় করছেন।
বগুড়ার এসপি জেদান আল মুসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফোরকানের বাবাকে এ ব্যাপারে আদালতে আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শাজাহানপুর থানার ওসিকেও নির্দেশ দিয়েছেন জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাবা যেখানে নারাজ, সেখানে কেন মামলা করেছেন, এই প্রশ্নে যুবদল নেতা ইউনুস আলী হলুদ বলেছেন, “এটা রাজনৈতিক মামলা। আমি শুধু বাদী। আমাকে বগুড়া থেকে বিএনপির নেতা বলেছেন, তাই মামলা করেছি।”
মামলায় সাক্ষী করা শফিকুল ইসলাম শফিক বলেছেন, তিনি মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বাবার আবেদনে কী কথা
বগুড়ার এসপির কাছে করা আবেদনে আবদুল কুদ্দুস বলেছেন, তার ছেলে ফোরকান আলী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
তখন পুলিশ ও বিজিপি সদস্যদের ধাওয়ায়ে রাস্তায় ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে’ তিনি মারা যান। পরে তাকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় যুবদলেরই নেতা ইউনুস আলী হলুদ গত ৩০ অক্টোবর বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৬০ জনের নাম উল্লেখসহ ৪৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আসামিদের মধ্যে আছেন, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহেনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, মোস্তফা আলম নান্নু।
আদালত মামলাটি শাজাহানপুর থানায় নথিভুক্ত করতে বলে।
কুদ্দুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউনুস আলী আমাদের না জানিয়ে, আর্থিকভাবে লাভবান হতে ‘কুউদ্দেশ্যে’ মামলাটি করেছেন।
“মামলার সাক্ষী শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক ও উপজেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান বাদীর সঙ্গে যোগসাজস করে এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছে চাঁদা দাবি ও টাকা আদায় করছেন।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ করিম বলেন, “আদালতে মামলা হয়েছে। সেই মামলার বাইরে আমি যেতে পারি না। তবে ফোরকানের বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
“উনাকে বলেছি, যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে তাই আপনি আদালতেও আবেদন দিন। তিনি আদালতেও আবেদন করেছেন বলে শুনেছি।”
নিহতের বাবার আবেদনের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে শাজাহানপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম বলেন, “ওই মামলার আসামি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ