মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ছিলেন সাবেক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী লে. ক. মুহাম্মদ ফারুক খান। এমনই অভিযোগ তার এলাকাবাসীর। এছাড়া নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন পদ বাণিজ্যসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ছাড়তে হয় চাকরি। এরপর ১৯৯৬ নির্বাচনে কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন কিনে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। রাজাকার থেকে দিনে দিনে হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের কাণ্ডারী।
২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম যুক্ত করার জন্যও করেছিলেন দৌড়ঝাঁপ। তবে ফারুক খানকে নিয়ে বিতর্ক থাকায় দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সনদ দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রথম অপারেশন চালান এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। ‘দিনাজপুরের মুক্তিযুদ্ধ’ নামক বইয়ে যা উল্লেখ রয়েছে।
আরও জানা গেছে, ফারুক খানের পরিবারের একাধিক সদস্য তালিকাভুক্ত রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে নিরীহ মানুষের ওপর নানা নির্যাতন চালিয়েছেন তারা। দখল করেছেন শত শত মানুষের বাড়িঘর। মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে ১৯৭২ সালে ফারুক খান ও তার পরিবারের সদস্যদের মুকসুদপুর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এরপর স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার সাহায্যে এলাকায় ফিরে আসেন।
৭০ বছর বয়সী মিকাইল নামে স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন, ফারুক খান নিজেই রাজাকার ছিলেন। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যরাও তালিকাভুক্ত রাজাকার।
যার জন্য ১৯৭২ সালে ফারুক খান ও তার পরিবারের সদস্যদের মুকসুদপুর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ৯০’র দশকে ফারুক খানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠলে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন।
১৯৯৫ কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ থেকে গোপালগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন কেনেন ফারুক খান। এরপর থেকে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আসনটি থেকে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফারুক খান। ২০০৮ সালের পর থেকে আসনটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন ফারুক। এরপর থেকে ভিন্নমতের মানুষের ওপর পুলিশসহ নিজের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নির্যাতন চালাতেন তিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কবির মিয়া বলেন, ফারুক খান ছিলেন রাজাকার এবং তার পরিবারের সদস্যরাও তালিকাভুক্ত রাজাকার। ১৯৭২ সালে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আমার শ্বশুর সাবেক মেয়র আতিকুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের হাতেপায়ে ধরে এলাকায় আসেন।
স্থানীয় কাইউম মোল্লা বলেন, ২০০৮ সালের পর ফারুক খান মুক্তিযুদ্ধ সনদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন। তবে তাকে নিয়ে বিতর্ক থাকায় তাকে মুক্তিযুদ্ধ সনদ দেওয়া হয়নি। আর এ খবর এলাকার সবারই জানা।
ফিরোজ শেখ নামে এক যুবক বলেন, ফারুক খান জনপ্রতিনিধি হিসেবে মোটেও ভালো ছিলেন না। তিনি তার নিজের মানুষ ছাড়া কাউকে পাত্তা দিতেন না। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এবং তার পরিবার রাজাকার ছিলেন তা মুকসুদপুরের সবারই জানা। ওই সময় সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করায় এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের।
এদিকে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দলে থাকা ২৩ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করেন বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেই ২৩ জনের মধ্যে নাম ছিল ফারুক খানের।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগে ২৩ জন যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। তারা বা তাদের পরিবার কোনো না কোনোভাবে ৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এসব নেতা ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বনে গেছে। এ ব্যক্তিরা, তাদের সন্তান-সন্তুতি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা বা তাদের টিকিটে নির্বাচন করছে। এখন তারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা।
এ ঘটনায় দোলেয়ার হোসেন সরদার নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ আদালতে ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে।
মূলত ফারুক খানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার খান্দারপাড় ইউনিয়নের বেজড়া গ্রামে। তিনি মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার্স করেছেন।
১৯৯৬ সালের পর থেকে টানা ছয়বার গোপালগঞ্জ-১ আসন মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ