সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
শাহ মতিন টিপু
না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। শুক্রবার দিবাগত রাতে কিউবার রাজধানী হাভানায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ৯০ বছর বয়সী এই নেতার মৃত্যুর খবর টেলিভিশনে ঘোষণা করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ফিদেল কাস্ত্রোর ভাই রাউল কাস্ত্রো রাউল কাস্ত্রো।
অবশ্য শিগগিরই মারা যাবেন এমন ইঙ্গিত দিয়ে কিউবার জনগণ ও তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। গত বছর কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ৮৯ বছর বয়সী এই নেতা বলেন, তিনি হয়তো শিগগিরই মারা যাবেন। কিন্তু বিপ্লব নিয়ে তাঁর পরিকল্পনাগুলো বেঁচে থাকবে।
নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফিদেল কাস্ত্রো বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই আমার বয়স ৯০ বছর হয়ে যাবে। তখন আমিও অন্যদের মতো হয়ে (মারা) যাব।’
বর্ষীয়ান এই বিপ্লবী বলেন, ‘শেষ সময়টা আমাদের সবার জীবনেই আসবে। কিন্তু কিউবার কমিউনিস্ট দলের ধারণা, এই পৃথিবীতে আজীবন রয়ে যাবে। বিশ্ববাসী জানবে, যদি তাঁরা সততার সঙ্গে কাজ করে, তাহলে তাঁরা মানবসভ্যতার জন্য ভালো জিনিস ও সংস্কৃতি তৈরি করতে পারবে। আর এসবের জন্য আমাদের ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর পরপর কিউবায় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত থাকেন দলের বড় বড় সব নেতা। এই কংগ্রেসে থেকে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন ফিদেল কাস্ত্রোর ছোট ভাই ও দেশটির বর্তমান প্রধান রাউল কাস্ত্রো (৮৪)। ২০১৮ সালে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন।
কংগ্রেসের উদ্বোধন করে ফিদেল কাস্ত্রো জানিয়েছিলেন, এর পর থেকে ৭০ বছর বয়সেই অবসরে যাবেন দলের নেতারা। আগামী ২০২১ সালে পরবর্তী কংগ্রেসের ঘোষণাও দেন তিনি। সেই কংগ্রেসকে নতুন প্রজন্মের নেতারা নেতৃত্ব দেবেন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এবারের কংগ্রেসই হচ্ছে ঐতিহাসিক প্রজন্মের শেষ কংগ্রেস।
সম্প্রতি কিউবা সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দীর্ঘ ৮৮ বছর পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশটি সফর করেন। তবে সফরে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। ওবামা চলে যাওয়ার পর এক বিবৃতিতে ফিদেল কাস্ত্রো বলেন, কিউবার মার্কিন সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এখানে কমিউনিস্ট আদর্শের সঙ্গে দেশ চলবে।
এরপর কিউবার বিপ্লবী এই নেতা নিজের ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। হাভানার কার্ল মার্কস থিয়েটারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিবিসি জানায়, ফিদেল কাস্ত্রোর জন্মদিন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তাঁর ভাই ও কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। অনুষ্ঠানে দুই নেতার মাঝখানে বসে ছিলেন তিনি। বিদায় নেওয়ার দীর্ঘ কয়েক মাস পর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসমক্ষে আসেন ফিদেল কাস্ত্রো। অনুষ্ঠানে ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত এবং ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সমর্থিত হামলার বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
এই মহান নেতার পুরো নাম ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। জন্ম ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট। ১৯৫৯ সালে তিনি মার্কিন সমর্থিত একনায়ক ফুলগেন্সিও বাতিস্তার সরকারকে উৎখাত করেন। বাতিস্তা সরকারকে উচ্ছেদের পর ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
বাংলাদেশের জনগণের মাঝে এই নেতা সম্পর্কে আছে একটি ভালবাসার দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে তার একটি উক্তি। যে উক্তিটি ফিদেল কাস্ত্রোকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অমর করে রাখবে।
১৯৭৩ সালের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সভায় আলজেরিয়ায় কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠক হয় বঙ্গবন্ধুর। বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।’ একজন মহান নেতাকে প্রথমবার দেখে আরেক মহান নেতার এই ছিল উক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতারও সমর্থক ছিলেন তিনি।
পৃথিবীর বাক পরিবর্তনের এক ঐতিহাসিক সময়ে ফিদেল কাস্ত্রোসহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, ইন্দ্রিরা গান্ধী, ইয়াসির আরাফাতসহ বেশ কিছু অবিসংবাদিত নেতা। যাদের প্রজ্ঞা, মেধা এবং অকল্পনীয় দেশাত্মবোধ মানুষকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে চেনার মধ্য দিয়ে আজ সমস্ত বাংলাদেশের মানুষের কাছেই চিরচেনা হয়ে থাকলেন।
( রাইজিংবিডির সৌজন্যে)