শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুসলিমা খাতুন প্রতিবন্ধী জেনেও পারিবারিকভাবেই আবু হানিফের সঙ্গে চার বছর আগে বিয়ে হয়। মাত্র কিছুদিন ভালো চলে তাদের সংসার জীবন। তবে এই ভালো সেই ভালো নয়, আবু হানিফের পরিবারের সদস্যরা মুসলিমাকে যৌতুকের দাবিতে নানাভাবে নির্যাতন করতেন। অবশেষে নির্যাতনের শিকার হয়ে মুসলিমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পালপুরে যৌতুকের দাবিতে প্রতিবন্ধী গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী আবু হানিফের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর রাজশাহীর পবার হরিপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তাফার মেয়ে মুসলিমা খাতুনের (২২) বিয়ে হয় গোদাগাড়ীর পালপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের ছেলে আবু হানিফের (২৮) সঙ্গে। সাংসারিক জীবনের তাদের একটি সন্তান রয়েছে। বিয়েতে ছেলে হানিফকে নগদ ৬ লাখ টাকা দেন মেয়ের বাবা। এর মাত্র কয়েকদিন পরে আরো টাকার জন্য নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে মুসলিমাকে। একপর্যাযে মুসলিমা খাতুনকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তার পরিবারের লোকজন রাজশাহীর আমলী এক নম্বর আদালতে আবু হানিফের নামে যৌতুক আইনের চার ধারায় একটি মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ৩৮৬ সি/২০১৬ (পবা)। পরে তারা মুসলিমা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে মামলা তুলে নিবে বলে নানাভাবে অঙ্গিকার করেন। একপর্যায়ে গত ২৪ এপ্রিল একটি আপসমূলে প্রত্যাহার করে নেন।
শুধু তাই নয়, সংসার চলাকালে গত ৮ জুলাই রাত নয়টার দিকে আবু হানিফ তার বাবা আনোয়ার হোসেন এবং মা মুশিয়া বেগম জমির অংশ চাই। তারা বলেন, আমাদের গ্রামের তোমার নানার জমির অংশ থেকে এক বিঘা জমি যৌতুক হিসেবে লিখে দিতে। যদি জমি না দাও তাহলে চার লাখ টাকা দিতে হবে। এ কথা চলার একপর্যায়ে তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে মারপিট করে।
এসময় অন্যারা তাকে ধরতে আসলে তাদেরও মারধর করে আবু হানিফ। এ বিষয়টি পরে মেয়ের বাবা গোলাম মোস্তাফাকে জানানো হলে তিনি এসে যৌতুক হিসেবে জমি বা টাকার বিষয়টি জেনে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। পরে স্থানীয় ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে তাকে উদ্ধার করে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওসিসি ভর্তি করা হয়।
পরে রামেকে চিকিৎসা শেষে গোদাগাড়ী থানায় মেয়ে বাবা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তাদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।
এবিষয়ে মুসলিমার মা মমোতাজ বেগম বলেন, বিয়ের কিছুদিন পরে মুসলিমাকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে বাড়িতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে মুসলিমার স্বামী আবু হানিফের পরিবারের সদস্যরা গিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। এসময় অঙ্গিকার করে আসে ছেলের স্ত্রী মুসলিমাকে আর মারধর করা হবে না। তারপরেও আবার মারধর করে, কয়েকদিন পরে তালাকের কাগজ পাঠিয়ে দেয় আবু হানিফ।
এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিপচুর আলম মুন্সি বলেন, এবিষয়ে আমার জানা নেই। নির্যাতিত গৃহবধূ থানায় এসে অভিযোগ দিলে আইনগত সহযোগিতা প্রদান করা হবে।