শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ জোড়া যমজ শিশু লেখাপড়া করছে। এক সঙ্গে ১১ জোড়া যমজ বাচ্চার লেখাপড়া করার বিষয়টি বিরল হলেও তাদের স্কুলে আগমন, খেলাধুলাসহ সকল কর্মকাণ্ড বিমোহিত করে স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে পুরো বদরগঞ্জ উপজেলাজুড়ে।
যমজ মেয়ে রাই ও রুপন্তি দুজনেই বদরগজ্ঞ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন দুই যমজ বোন স্কুলে আসে। দুজন একই পোশাক পরার পাশাপাশি মাথার ক্লিপ থেকে শুরু করে জুতামোজা সবই একই ধরনের ছাড়া তারা পরবে না বলে তাদের মালতি রানী জানালেন।
তিনি বললেন, রাই ও রুপন্তির বাবা হরিদেব চন্দ্র ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মাঝে মাঝেই বাসায় আসলে তিনিও রাইকে রুপন্তি হিসেবে ভুল করেন। তখন মেয়ে বলে, বাবা আমি রুপন্তি না, আমি রাই। একইভাবে মালতি রানীরও ভুল হয়ে যায়, একই জামা পরলে। তবে তারা স্কুলে আসতে, লেখাপড়া করতে খুবই পছন্দ করে। দুই যমজ মেয়ে মেধাবি বলেও জানান তাদের মা।
যমজ ভাই অরব ও নিরবের মা বাসন্তি রানী জানালেন তার যমজ ছেলে দুজনই একে অপরকে ছাড়া খেলাধুলা করতে চায় না। লেখাপড়ায় মেধাবি বলে জানালেন।
সুপ্রীতি ও সুপ্রীমা দুই যমজ বোন শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে বলে জানালেন তাদের মা সারদী রানী।
তিনি বললেন, স্কুল থেকে তাদের বাসা চার কিলোমিটার দুরে বাসন্তিপুর গ্রামে। নৌকায় করে নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয় তাদের। এতদূর থেকে আসলেও তাদের মধ্যে কোনো ক্লন্তি লক্ষ্ করা যায় না।
দুই যমজ বোনের মধ্যে প্রচণ্ড মিল। একজন কোনো প্রশ্নের উত্তর হয়তো পারল না, তখন তার অপর বোন তাকে বলে দেয়। দুজন দুজনকে ছাড়া কোথাও যেতে চায় না। সবচেয়ে সমস্যা হয় একই ধরনের ড্রেস ছাড়া পরবে না তারা। এমন কি মাথার ক্লিপটাও একই ধরনের হতে হবে।
সরেজমিন বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল ১১ জোড়া যমজ শিশু শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। যমজ শিশুদের জীপনযাপন অন্য শিশুদের চাইতে অনেকটাই ভিন্ন বলে জানালেন তাদের মা ও স্বজনরা।
ওই স্কুলের শিক্ষিকা আফসানা নাজনীন জানালেন, তার ক্লাসে তিন জোড়া যমজ শিশু লেখাপড়া করে। বিষয়টি তিনি খুবই উপভোগ করেন। তাদের চালচলন, হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গি; সব একই ধরনের হয় বলে জানালেন তিনি। তবে তিনি লক্ষ করে দেখেছেন, যমজ শিশুরা কিন্তু খুব মেধাবি হয়। তারা সহজেই যেকোনো পড়া মুখস্ত করতে পারে।
তারা একজন আর একজনকে ছাড়া কোনো কাজই করতে চায় না। খেলাধুলা কিংবা গান শেখা সব কাজেই এক সঙ্গে করা তাদের পছন্দ। অন্যদিকে ভাইবোন দুজন যমজ হলে, এদের ক্ষেত্রে অল্প পার্থক্য দেখা যায়। দুই যমজ ভাইবোনের মধ্যে যে আকর্ষণ তা বলার মতো নয়।
অপর এক শিক্ষিকা মাধবী চন্দ্র জানান, শিশু শ্রেণিতে পাঁচ জোড়া যমজ শিশু লেখাপড়া করে। তাদের ক্লাস নিতে পছন্দ করেন তিনি। যমজ শিশু আর সাধারণ শিশুদের মাঝে একটু পার্থক্য আছেই। তারা সবধরনের কাজ এক সঙ্গে করতে পছন্দ করে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মা ও স্বজনরা বললেন, যমজ বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করছে খেলাধুলা করছে পুরো বিষয়টা তাদের ভালোই লাগে। তাদের ছেলেমেয়েরা কৌতুহলবশত যমজ শিশুরা কেমন, তাদের চলাফেরা, আচার আচরণ কেমন; এসব বিষয় জানতে চায়।
প্রধান শিক্ষক মো. মইনুল শাহ জানালেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণত শিক্ষার্থীরা পড়তে চায় না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম তাদের স্কুলটি। এখানে সাড়ে ৬০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীদের যত্ন নেওয়ায় কারণেই অভিভাবকরা উৎসাহী হয়েছেন। ১১ জোড়া যমজ শিশুর লেখাপড়ার করার বিষয়টি নিয়ে তিনি জানান, তাদের প্রতি আলাদা ভাবে টেককেয়ার করা হয়।
বদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিক উজ্জামান বলেন, একটি স্কুলে ১১ জোড়া যমজ শিশুর লেখাপড়া করার বিষয়টি বিরল ঘটনা। বিষয়টি জানার পর যমজ শিশুদের মায়েদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে শিশুদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়গুলো জেনে সেভাবেই ব্রিফ করা হয় বলে জানালেন তিনি।- ঢাকা ট্রিবিউন