শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সামসুল ইসলাম টুকু:
যেসব সন্তানেরা তাদের জ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজে ও কর্মক্ষত্রে নিজেদের উদ্ভাসিত করেন তাদের ‘মা’দের রতœগর্ভা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । যদিও সন্তানেরা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে নিজেদের রত্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন কিন্তু এর পেছনে ‘মা ‘ দের অবদান অনস্বীকার্য । একজন ‘মা’ বহু ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে এবং সন্তানের প্রতি সীমাহীন স্নেহ ,ভালোবাসা,যত্ন ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েই গড়ে তুলেন । তবে যে ‘মা’ এর সন্তানেরা কীর্তিমান হতে পারেন রত্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন তাদের ‘মা’এরা রত্নগর্ভা হিসেবে বিবেচিত হন । কিন্তু যে ‘মা’এর সন্তানেরা কথিত কীর্তিমান বা রত্ন হতে পারেননা তবে সৎ ও চরিত্রবান হন তাদের ‘মা’এরা কি রত্নগর্ভা নন ? এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পাওয়া নিঃসন্দেহে কষ্টকর এমনকি রুঢ় ও নিষ্ঠুর হতে পারে । এ বিতর্কে নাই বা গেলাম ।
গত ১ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে একটি বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার ৮০ জন ‘মা’কে দি ইঞ্জিনিয়ার্স রত্নগর্ভা ‘মা’ ২০২২ সম্মাননা প্রদান করে আইইবি কর্তৃপক্ষ। সেদিন রত্নগর্ভা ৮০ জন ‘মা’সহ তাদের পরিবার পরিজনদের আমন্ত্রন জানিয়েছিল আইইবি কর্তৃপক্ষ । ফলে মিলনায়তনটি মানুষে ভর্তি হয়েছিল । তিল ধারনের জায়গা ছিলনা । আইইবি কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে প্রথম এমন ব্যাতিক্রমি ও মহান উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ৬০ জন ‘মা’কে রত্নগর্ভা পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করেন । এরপর ৩ বছর করোনা সহ বিভিন্ন কারনে এমন অনুষ্ঠান করতে পারেনি তারা । এই ৩ বছরে রত্নগর্ভা ‘মা’এর সন্তানেরা তাদের ‘মা’ এরা কেন রত্নগর্ভা এই বাখ্যা সহ আইইবি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে থাকেন । প্রাপ্ত এমন ৪০০ টি আবেদন যাঁচাই বাছাই করে এবার ৮০ জন ‘মা’কে রত্নগর্ভা সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।অনুষ্ঠানে প্রবেশের পুর্বেই রত্নগর্ভা‘মা’দের একটি রজনীগন্ধা ফুলের স্টীক একটি সুন্দর উত্তরীয় পরিয়ে অভ্যার্থনা জানানো হয় । সেইসাথে আর্ট কার্ডের সুন্দর মোড়কে বাঁধানো ২১৬ পৃষ্ঠার গ্লোসী আর্ট পেপারে রত্নগর্ভা ‘মা’এর জীবন বৃতান্ত , রঙ্গিন ছবি এবং পরিজন্দের ছবি সম্বলিত একটি স্মরনীকা হাতে তুলে দেওয়া হয় । যা রত্নগর্ভা ‘মা’ সহ আগত সকলকেই চমতকৃত করে । রত্নগর্ভা ‘মা’ ও পরিজন্দের অনুষ্ঠানে প্রবেশ শেষ হলে প্রত্যেককে কোক ও পানির বোতল সহ একটি বিরিয়ানীর প্যাকেট পরিবেশন করা হয় । খাবার পর্ব শেষ হলে মুল অনুষ্ঠান শুরু হয় । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপুমনি এমপি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তাই ভারচুয়ালি অংশ গ্রহঙ্করে রত্নগর্ভা ‘মা’দের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন । অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ রত্নগর্ভা ‘মা’দের একজন করে মঞ্চে ডেকে একটি সনদপত্র , একটি ভারি পিতলের মেডেল ও ওজনদার পিতলে নির্মিত ‘মা’তার শিশু সন্তানকে কোলে নিচ্ছেন এমন আবেগঘন একটি মুর্তি বা ক্রেষ্ট উপহার দেওয়া হয় । এমন একটি ব্যাতিক্রমি অনুষ্ঠানে সম্মান প্রদান রত্নগর্ভা ‘মা’দের গর্বিত করেছে । দিয়েছে নির্মল আনন্দ । রত্নগর্ভা ‘মা’এরা আয়োজকদের দিয়েছে প্রানঢালা আশীর্বাদ এতবড় ও মহান অনুষ্ঠান সুশৃঙ্খল্ভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশংসার দাবী রাখে আইইবি কর্তৃপক্ষ ।কর্তৃপক্ষ ঘোষনা দিয়েছেন প্রতি বছর নিয়মিতভাবে এমন অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন ।
এতকিছুর পরেও অনুষ্ঠানে কিছু ঘাটতি লক্ষ্যনীয় । যেমন অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বার বার একটি ঘোষনা হচ্ছিল । তাহলো প্রকৌশীর ‘মা’ মানেই রতœগর্ভা । আর আইইবি র নিবন্ধিত প্রকৌশলী হলেই তিনি তার তার ‘মা’এর রত্নগর্ভার আবেদন করতে পারবেন । তা তিনি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হোন অথবা বিএসসি প্রকৌশলী হোন । অর্থাৎ কোন ‘মা’এর সন্তান অন্য বিষয়ে রত্ন হলেও প্রকৌশলী না হলে আবেদন করতে পারবেননা । সংগঠনটি যেহেতু প্রকোশলীদের সেহেতু তারা স্বার্থপর হতেই পারেন । কিন্তু রত্নগর্ভা ‘মা’ শব্দটির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বা উদার হতে পারেননি বা শব্দটির যথাযথ বিচার করেননি । কোন কোন ‘মা’এর সন্তানেরা প্রকৌশলী নাও হতে পারেন ।ডাক্তার , পুলিশ , কৃষিবিদ , সেনাবাহিনী , প্রসাসন , বিচার ,বা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা বা রত্ন হতে পারেন । কিন্তু আইইবির সাংগঠনিক নীতি অনুযায়ী এসব বিভাগের রত্নরা রত্নগর্ভা ‘মা’এর জন্য আবেদন করতে পারবেননা । তাদের ‘মা’এরা রত্নগর্ভা হয়েও রত্নগর্ভার সম্মাননা পাবেননা । অথবা এসব বিভাগের কর্মকর্তাদের এমন সম্মাননার প্রবর্তন করতে হবে ।
আইইবি কর্তৃপক্ষ এত উঁচু মানের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও রত্নগর্ভা ‘মা’এর আবেদনের জন্য সকল বিভাগের পথ উম্মুক্ত করতে পারেননি । স্ম্রনিকাটিতে দেখা যায় এক সন্তানের ‘মা’কে যেমন রত্নগর্ভা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে তেমনি নয় সন্তানের ‘মা’কেও রত্নগর্ভা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে । ফলে এক সন্তানের ‘মা’এর ত্যাগ ও শ্রমকে নয় সন্তানের ‘মা’এর ত্যাগ ও শ্রমকে একাকার বা একই মাপকাঠিতে বিচার করা হয়েছে যা প্রকারান্তরে অবিচার করা হয়েছে । এছাড়া ওই সুন্দর স্মরনিকাটি সম্পাদনা করেছেন প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন । সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি যত্নবান হতে পারেননি বলে প্রতিটি পাতায় ভুল দেখা যায় । তারপরেও স্মরনিকাটি রত্নগর্ভা ‘মা’দের জন্য একটি অনন্য দলিল হিসেবে রক্ষিত হবে ।
লেখক : সাংবাদিক