রমজানের ছায়া

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩, ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

ড. মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ:


আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের শ্রেষ্ঠ সময় রমজান এখন আমাদের মাঝে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার শাবান মাসের শেষ তারিখে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে এই মহিমান্বিত রমজান সম্পর্কে একটি খুতবা প্রদান করেন। ওই খুতবায় তিনি রমজানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। সেখানে তিনি রমজানের একটি সারমর্ম তুলে ধরেন। ওই খুতবায় তিনি বলেন, হে লোকসকল! তোমাদের মাঝে ছায়াস্বরূপ এক মহান মুবারক মাস সমাগত। …

এখানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানকে ছায়ার সাথে তুলনা করেছেন। রমজান আমাদের জন্য শান্তিদায়ক কোমল ছায়া। উপস্থিত শ্রোতা সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন মরু অঞ্চলের অধিবাসী। ছায়ার মূল্য তারা বুঝতেন। মরু অঞ্চল, চরাঞ্চল কিংবা খোলা আকাশের নীচে প্রখর রৌদ্রতাপে হেঁটে চলা ক্লান্ত পথিকমাত্রই ছায়ার কদর বোঝেন। ক্লান্ত পথিকের জন্য ছায়া খুবই উপকারী। পথ চলতে চলতে পথের ধারের কোনো এক বৃক্ষের ছায়া ক্লান্ত পথিকের জন্য বিশাল আনন্দের বিষয়। পথিক শীতল ছায়ায় সামান্য বিশ্রাম নিয়ে গা জুড়িয়ে নেয়। এ ছায়া তাকে মূলত দুটি উপকার করে। এক. ছায়ার নিচে সামান্য বিশ্রাম ক্লান্ত পথিকের দীর্ঘক্ষণ পথ চলার ক্লান্তি দূর করে। দুই. ক্লান্তি দূর হওয়ার পর শরীরে নতুন শক্তি তৈরী হয়। তৈরী হয় নতুন উদ্যমী শক্তি। যে শক্তির বলে সে পাড়ি দেয় বাকী পথটুকু। রমজানও এমনই এক সুশীতল ছায়া। বান্দা দীর্ঘ এগারো মাস হাজারো পাপের কাঁটাযুক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে জাহান্নামের অগ্নিতাপে ক্লান্ত-শ্রান্ত। দয়ার মালিক মহান রাব্বুল আলামীন জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে আর জান্নাতের দরজা খুলে দিয়ে সুশীতল ছায়ার সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাতে করে বান্দা বিগত পাপ-পঙ্কিলময় দিনের ক্লান্তি দূর করে সুন্দর আগামী দিনের পথ চলার শক্তি অর্জন করে।

ওই খুতবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। প্রতিটি ভাগের পৃথক পৃথক নাম দেওয়া হয়েছে। নামগুলোর বেশ তাৎপর্য রয়েছে। পথের ক্লান্তি নিয়ে কারো বাড়িতে যখন কোনো মেহমান উপস্থিত হন, তখন শীতল পানি, মিষ্টি শরবত আর হাত পাখার বাতাস দিয়ে তার ক্লান্তি দূর করা হয় এবং পরিবেশের সাথে আপন করে নেওয়া হয়। এরপর মেহমান তার আগমনের হেতু-উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে। আর্জি-আবেদন নিবেদন করে। তারপর মেজবানের পালা। ঠিক তেমনি বান্দা দীর্ঘ এগারো মাস পথ চলে রমজান মাসে প্রবেশ করে। রহমতের সুশীতল শরবত দিয়ে তাকে পরিবেশের সাথে আপন করে নেওয়া হয়। এরপর বান্দা আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত তথা ক্ষমার আর্জি পেশ করে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা প্রার্থনা কবুল করে তাকে নাজাত দেন। বিষয়টি এভাবেও বলা যায় যে, রমজানের বরকত লাভ করে যারা উপকৃত হতে চায়, তারা তিন ধরনের হয়ে থাকে। এক. যাদের ওপর গোনাহের কোনো বোঝা নেই। যেমন সিদ্দিকীন সালেহীন এবং খাঁটি আল্লাহওয়ালাগণ। এমন যারা, তাদের ওপর তো রমজান মাসের শুরু থেকেই, বরং বলা যায়, রমজানের প্রথম রাত থেকেই রহমত অনুগ্রহ আর পুরস্কারের বিশেষ বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকে। দুই. যাদের সামান্য কিছু গোনাহ রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন হতে হয়ে থাকে, রমজানের প্রথম অংশে তারা রোজা এবং নেক আমলের মধ্য দিয়ে নিজেদের গোনাহের কাফফারা আদায় করে নেয়। ফলে রমজানের মধ্যবর্তী দশকে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তিন. যাদের গোনাহ উপরোক্ত দ্বিতীয় শ্রেণির লোকদের চেয়ে বেশি। তারা যখন রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে রোজা রেখে এবং নেক আমল করে নিজেদের গোনাহসমূহের ভার কিছুটা হালকা করে, রমজানের শেষ দশকে তাদেরও দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি কাজ রমজান মাসে বেশী করে করতে বলেছেন। তন্মধ্যে প্রথম দুইটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তা হচ্ছে কালেমা তাইয়েবা বেশী বেশী পাঠ করা এবং বেশী বেশী আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করা। আর দ্বিতীয় দুইটি কাজ হচ্ছে আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি চাওয়া।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রহমতের সুশীতল ছায়া দান করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দিন।
লেখক: পেশ ইমাম, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট জামে মসজিদ, রাজশাহী