সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
ড. মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ:
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মুবারকের আজ নবম দিন। মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পবিত্র রমজান পালন করছেন। এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কঠোর সিয়াম সাধনা। রমজানের এই কঠোর সিয়াম সাধনার অসাধারণ পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যেমন হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। যখন তাঁরা প্রবেশ করবে তখন ঐ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। (বুখারী) রমজানের সম্পর্ক হচ্ছে রোজার সাথে। সেই রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়া। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারী)
অপর এক হাদীসে রয়েছে, রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ হচ্ছে ইফতারের সময় অপরটি আনন্দটি হচ্ছে- আল্লাহ তায়ালার সাথে মোলাকাত লাভের সময়। এখানে মূল হাদীসে প্রথম আনন্দের সময়ের কথা বলতে গিয়ে ‘ফিতরিহী’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক. ইফতার। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের মুহূর্তে যখন এক চুমুক পানি পান করা হয় তখন রোজাদার ব্যক্তি যে তৃপ্তি ও আনন্দ লাভ করেন তার কোনো তুলনা হতে পারে না। অপর অর্থটি হতে পারে ঈদুল ফিতর। এ অর্থটিও গ্রহণ করা যেতে পারে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদের দিন সকালে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য গুনাহ মাফের ঘোষণা দেওয়া হয়। কোনো ব্যক্তির জন্য এটা পরম আনন্দের। সেদিন যদি রোজাদার ব্যক্তি নতুন পোষাক নাও পরিধান করেন, পোলাও-গোশত নাও খান, তবুও তার যে আনন্দ, বেরোজাদার ব্যক্তি নতুন-দামী পোষাক পরিধান করে ও পোলাও, বিরিয়ানী খেয়েও সে আনন্দ লাভ করতে পারে না।
অপর আনন্দটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে মোলাকাত। হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়, আল্লাহর সাথে বান্দার মোলাকাত হবে জান্নাতের ভেতর। সুতরাং আল্লাহর সাথে মোলাকাতের জন্য রোজাদার ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করতে হবে। যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে আর বের হবে না। ফলাফল দাঁড়াচ্ছে রোজাদার ব্যক্তির জন্য জান্নাত অবধারিত।
হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য রাখা হয়। আমিই এর পুরস্কার দেব।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজান উপলক্ষে আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি পুরস্কার দান করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী উম্মতকে দেওয়া হয়নি।
১. রোজাদার বান্দার মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মিশ্ক্ আম্বরের চেয়ে বেশী সুঘ্রাণযুক্ত।
২. রোজাদার বান্দার জন্য সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত দুআ করে এবং ইফতার পর্যন্ত দুআ করতে থাকে।
৩. প্রতিদিন তাদের জন্য জান্নাতকে সুসজ্জিত করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দারা অতি শীঘ্র দুনিয়ার কষ্ট ক্লেশ ত্যাগ করে তোমার নিকটে আসছে।
৪. পবিত্র রমজানে দুর্বৃত্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। সুতরাং সে রমজানে ওই সব গুনাহ করাতে সক্ষম হয় না যা অন্য মাসে সহজে করাতে পারে।
৫. রমজানের শেষ রাত্রে রোজাদারদের জন্য মাগফিরাতের ঘোষণা দেওয়া হয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি শবে কদরে হয়ে থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, না, বরং নিয়ম হলো মজদুর কাজ শেষ করার পরেই মজুরী পেয়ে থাকে।
এখানে মুখের গন্ধ বলতে ক্ষুধাজনিত কারণে পেট থেকে যে গন্ধ বের হয়ে আসে তা বোঝানো হয়েছে। দাঁতের গন্ধ নয়। এ জন্য মিসওয়াক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
রোজার আধুনিক মাসায়েল
* সাধারণ পদ্ধতির এনজিওগ্রামের কারণে রোজা নষ্ট হয় না।
* ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙ্গে না।
* একজন রোজাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে।
* এ্যারোসল জাতীয় নাইট্রোগ্লিসারিন ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করে থাকে। জিহ্বার নিচে ২/৩ ফোটা ওষুধ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ডাক্তারদের মতে সাথে সাথে ওই ওষুধ শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায়। এ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না।
* এনিমা ব্যবহার, চোখে কিংবা কানে ড্রপ দেওয়া, দাঁত তোলা, কোনো ক্ষতস্থানের চিকিৎসা নেওয়াতে রোজা নষ্ট হবে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের রমজানের বিধানগুলো সুচারুরূপে পালনের মাধ্যমে পুরস্কার অর্জনের তাওফীক দান করুন।
লেখক: পেশ ইমাম, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট জামে মসজিদ, রাজশাহী