রাজনৈতিক পোস্টার ব্যানারে ইতিহাস বিকৃতি || নেতৃস্থানীয়দের সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

বাঙালিদের জাতীয় জীবনে মাহান একুশে- শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এগুলিতেই জাতির অস্তিত্ব গভীর শেকড়ে প্রেথিত। স্পর্শকাতরও বটে। কেননা এর সাথে জাতির গৌরব, ত্যাগ, তিতিক্ষার ইতিহাস ঘনিষ্ট-জড়িয়ে আছে। তাই এসব দিবস পালনে, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও স্মরণে কিংবা অনুশীলনে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এসব কিছু ইতিহাসের বিষয়। না জেনে শুনে এ সবের অনুশীলন করতে গেলে সেই ইতিহাস বিকৃতির আশংকা থেকে যায়Ñ যা বিশেষ করে শিশু মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
এবারে ভাষাশহিদ দিবসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তালগোল পাকিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে তিব্র সমালোচনার মুথে পড়তে হয়েছে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগকে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগও সমালোচনার বাইরে নয়। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটা ‘প্রিন্টিং মিসটেক’। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি নয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস উপলক্ষে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কয়েক নেতার নামে সাঁটানো পোস্টার ও ব্যানারে এরকম অসঙ্গতি চোখে পড়ে।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে ‘৩০ লাখ শহীদের প্রতি’ শ্রদ্ধা জানিয়ে নগরীর চকবাজার এলাকার চকভিউ মার্কেট, গুলজার মার্কেট ও চট্টগ্রামে কলেজের সীমানা প্রাচীরে একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে।
১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নাহিদুল ইসলাম জাবেদের ‘সৌজন্যে’ যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর ‘পক্ষে’ ওই পোস্টারটি লাগানো হয়।
ছবিতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির আকার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নুর মোস্তফা টিনু ও নাহিদুল ইসলাম জাবেদের ছবির চেয়ে ছোটো।
২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ‘নেতা’ ফিরোজ পাটোয়ারির সৌজন্যে নগরীর আসকার দিঘির দক্ষিণ পাড়ের কাঁচাবাজারের টিনের বেড়াতে একটি ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে।
২১ নং জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা লীগের নাম ওই ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে লেখা হয়েছে- ‘হে অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি হাজারো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে শহীদ দিবস আমি কি তোমায় ভুলিতে পারি’। বাক্যটি শেষ করে ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘শহীদ দিবস অমর হোক’।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী গণমানুষের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন। বাঙালি জাতির সংগ্রামের ইতিহাসের পরতে পরতে যে সংগঠনের নাম জাজ্জ্বল্যমান হয়ে আছে। সেই সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহিদ দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি জানবে না এটা খুবই দুঃজনক। রাজনীতি অনুশীলনের এই নি¤œমান আমাদেরকে হতাশ করে। একটা সময় ছিল যখন রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়মিত ক্লাস নেয়া হতোÑনেতাকর্মীদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ইতিহাসসহ নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রশিক্ষণের বিষয়টি তেমন করে আর লক্ষ্য করা যায় না।
অন্তত ইতিহাস বিকৃতি রুখতে রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ- সহযোগী সংগঠনসমূহের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট, দেয়াল লিখনসহ কোনো প্রচারণা প্রকাশের আগে তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। যে যার মত করে প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা কিংবা দায়িত্বশীলদের পরামর্শ নিয়ে প্রকাশনার কাজগুলি হলে ভাষা, বানান ও ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি রোধ করা সম্ভব হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃস্থানীয়দের সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ