বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী অঞ্চলের স্বাদু পানিতে এরই মধ্যে গলদা চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু পোনার সঙ্কটে চাষ খুব একটা এগুচ্ছে না। তবে সেই সঙ্কট এবার কাটছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীতেই মিলবে গলদা চিংড়ির পোনা। আর তাই এখন এখানে আধুনিক হ্যাচারি নির্মাণ করছে রাজশাহী মৎস্য দফতর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আমবাগান এলাকার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারেই স্থাপন করা হচ্ছে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের এই হ্যাচারি। অত্যাধুনিক এ হাচারি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৪ কোটি টাকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হবে নির্মাণ কাজ। এরপর শুরু হবে পোনা উৎপাদন। বছরের মাঝামাঝি থেকেই এখান থেকে পোনা সংগ্রহ করতে পারবেন মাছ চাষিরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, এখানে উৎপাদিত মানসম্মত গলদা পোনা সরবরাহ করা হবে রাজশাহী ছাড়াও নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে। বর্তমানে নাটোরের মৎস বীজ উৎপাদন খামার থেকেই পোস্ট লার্ভা সংগ্রহ করে কিশোর চিংড়ি বিক্রি করছেন কয়েকজন চাষি। তাদের কাছ থেকে কিশোর চিংড়ি নিয়ে গিয়ে চাষ করছেন চাষিরা। ফলে চাষিদের ব্যয় বেশি হয়। তবে রাজশাহীতে পোনা পেলে চাষিদের ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি চাষেও আগ্রহ বাড়বে তাদের।
জেলার পুঠিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা নান্দিপাড়া এলাকায় গলদা পোনা চাষ করছেন ইউসুফ আলী। তিনি স্বাদু পানিতে গলদা চাষ শুরু করেছেন ২০১০ সালে। সফলতাও পেয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি জাতীয় যুব পুরস্কার জিতেছেন। এ বছর তিনি ৬৫ শতকের একটি পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা চাষ করেছেন।
সফল এই গলদা চাষি বলেন, নাটোরের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে প্রতি পিস দুই টাকায় পোস্ট লার্ভা সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সেগুলো পালন করেন পুকুরে। ৪০ দিন পর এগুলো কিশোর চিংড়িতে পরিণত হয়। এরপর প্রতিপিস ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করে দেন। স্থানীয় চাষিরা এসব কিশোর চিংড়ি নিয়ে গিয়ে কার্পজাতীয় মাছের সাথে চাষ করেন। এ নিয়ে আরো বেশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
জেলার পবা উপজেলার কর্ণহার এলাকার পোনা চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, চাষিরা তাদের কাছ থেকে কিশোর চিংড়ি সংগ্রহ করেন। ছয় মাসের মধ্যে একেকটি চিংড়ির ওজন ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম হয়ে যায়। প্রতিকেজি ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব চিংড়ি।
ওই এলাকার চিংড়ি চাষি শফিউল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে দিন দিন গলদা চিংড়ি চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পোনার সরবরাহ নেই। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে পোনা চাষ হওয়ায় দামও পড়ছে বেশি। সরকারী উদ্যোগে রাজশাহীতে পোনা উৎপাদন শুরু হলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে গলদা চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ।
এ বিষয়ে রাজশাহী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক আবদুল খালেক বলেন, চাষিদের ভাবনার পুরোটাই সঠিক। তাই পোনার সঙ্কট কাটাতেই নির্মিত হচ্ছে সরকারি হ্যাচারি। বাবা ও মা মাছ এনে এই হ্যাচারিতে পোস্ট লার্ভা উৎপাদন করা হবে। এরপর চাষিরা সেগুলো নিয়ে গিয়ে কিশোর অবস্থায় বিক্রি করবেন। ফলে নির্ধারিত মূল্যে চাষিরা মানসম্মত এ পোনা সংগ্রহ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, রাজশাহীর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে তিনটি করে ব্রড পুকুর, নার্সারি ও লালন পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। এর একটি পুকুরে তারা কিশোর চিংড়ি পালনের সুযোগ পাবেন। হ্যাচারি নির্মাণ শেষ না হলে বলা যাবে পুকুরটিতে কি পরিমাণ পোস্ট লার্ভা ও কিশোর চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হবে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, ধীরে ধীরে রাজশাহীতে বাণিজ্যিক গলদা চিংড়ির চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে চাহিদা বেড়েছে পোনার। মৎস্য অধিদফতর বরেন্দ্র অঞ্চলে গলদা চিংড়ির চাষ ছড়িয়ে দিতে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর একটি স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ ও অন্যটি ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ। গত অর্থ বছর থেকে শুরু হওয়া এসব প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে জেলার পবা, পুঠিয়া, চারঘাট, দুর্গাপুর ও বাঘায় শুরু হয়েছে গলদা চাষ। প্রদর্শনী পুকুরসহ একজন চাষি ও আরো পাঁচ বন্ধু চাষি নিয়ে চলছে এ কার্যক্রম। এসব চাষির দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে আসছেন গলদা চাষে। এটি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তারা। লাভ বেশি হওয়ায় খুব শিগগির রাজশাহী অঞ্চলে গলদা চাষ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলেও আশা করেন তিনি।